আমার বাড়ির পুকুরে শান্ত আকাশ দাঁড়িয়ে
দুপুর বেলা, রোদ এখানে এলিয়ে পড়ছে
গাছের পাতা গ'লে লুটিয়ে দিচ্ছে আদর
আর মৃদু বাতাসে নাম না জানা কত ফুলের গন্ধ!
দূর থেকে তখন মানুষ দেখা যায় দু' এক করে
সবুজ ক্ষেতের আল বেয়ে খোলা গা'য়ে
সুখী চোখে, ভরা পেট আর পান জর্দা'র বিলাস।
সামান্যে কি অসামান্য আনন্দ ভাসে তাতে!
তাঁত জড়ানো শরীরের ভাঁজে আড়মোড়া ভাঙ্গে
নারীর হাসির কাকলিতে ঠাঁসা রুপার নোলক
আমার কপালে শুধু এক নীল বিন্দু টিপ দেখে
অপার বিস্ময়ে লুকিয়ে রাখে শহর দেখার ইচ্ছেটা!
ভাবে বুঝি, কোন এক হাট বারে
মনের মানুষটার সাথে আহ্লাদে নদী পেরিয়ে
চলে যাবে রঙের বাহারে মোড়া শহরে।
সন্ধ্যা বাতি জ্বালানোর ছলে ফিরে যাবে গাঁ'য়ে ফের
নীল বিন্দু টিপে বড় অস্বস্তি, মনে হবে তার ...
আহা! কি সহজ বসবাস।
মরচে পড়ে না মাটির শীতলতায়, সম্পর্কে কোন!
ধূলোয় ধোয়া শরীর ঝেড়ে দিলো ছুট
একদল পাখির মত ঝলমলে ছেলেগুলো
মাছরাঙ্গার সাথে পাল্লা দিয়ে সেরে নিল স্নান।
আর জলের রঙ এখন আসমানী থেকে সবুজ,
আকাশের রুপ গেছে পালটে!
আমি পা বাড়াই, ঘুরে দাঁড়াই, দেখি কূয়োর ধার
মনে পড়ে মা'র সাবধানী।
উঠোন পেরিয়ে খড়ের গুদাম, নিংড়ানো শুকনো ধান।
একপাশে পড়ে থাকা মাটির বাসনগুলো
পুতুলের সংসার; শাড়ি, মস্ত বড় বড় ঘুড়ি!
এখন হাতে প্রিয় পানা ফুল, বেগুনী সাদায়
আদুরে ছেলেটার অসাধারণ হাসি মাখা উপহার!
দাদাভাইয়ের বসার চেয়ার, দাদুর আলতা, রাজহাঁস, টাইগার
সিন্দুক, খাট, আরো আসবাব
দেখে দেখে বিকেল গড়ায়
আযান, শংখধ্বনি কানে আসে ভেসে
ইচিং বিচিং, ডাঙ্গুলি, এক্কা দোক্কা আর গোল্লাছুটে
একাকার প্রিয় মাঠ।
আষাঢ়ের মেঘ, বৃষ্টি কাঁদায় গড়াগড়ি
ভূতের রাজ্যে বীরবেশী রাজপুত্র আমি
অনাচার শেষ করে সত্যের খোঁজে।
... সেই আমার প্রিয় বাড়ি
সেখানে ছোট ছোট করে ছড়ানো শৈশব
অথবা নিরব দীর্ঘশ্বাস আর অবধারিত আমি!