বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৬

বিরতি

কোন শ্রবণেই দ্রবীভূত হয় না ঘোর। মাতাল হাওয়ার ঘ্রাণের মত সন্ধ্যায়, দু’একটি সাদা পাখির ওড়াউড়ি থামায় অকস্মাৎ। থামে প্রশ্রয়, থামে ইঙ্গিত। প্রণয়ও থেমে যায় ... কিংবা থামেনা হয়ত পথ।
পথই বাঁচায় সব আকুল আক্ষেপ অথবা নিরব প্রস্থান। নিজেকে নিজে ছাপিয়ে যাওয়ার লীলাখেলায় বড় ক্লান্ত লাগে। বলো তো, আবার বেঁচে উঠবে কিনা কথামালা? বলো, তুমি জানো কোথাও জেগে থাকে কেউ ...
ঘুমাও তুমি নিবিড় আলিঙ্গনে কারো। কোথাও বিছানা বালিশ শূণ্য থাকে পড়ে। কোথাও ভর দুপুরে ছায়ায় মলিন প্রথম দেখা!

চিঠি

তোমার একলা লাগে? অথচ এমন তো ছিল প্রতিজ্ঞা অবিচল কারো, বাঁচাবে তোমায়!
এই এক বাজি হেরে চলে গেছে সন্তর্পণে হেঁটে ...
জানলে না তুমি, জোনাকেরও লাগে ঘোর ঘোর অন্ধকার ... কিশোরের মুখে হাসি ফোটে!

জলেতে খুঁজেছো প্রতিবিম্ব কার, তুমি জানো ...
জানেনি তো সে! ভালবেসে অথবা একরাশ মোহ বুকে চেপে হারিয়ে গিয়েছে ভোরে।

যদি দেখো বৃষ্টির দেশে কোন ফুল ভেজে পাতার আড়ালে ...
কিছুটা দীর্ঘশ্বাসে নাম নিও তার।



বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬

ডাহুকের প্রয়াণ দিবসে

বহুদিন হলো শব্দেরা মিলছে না, কখনো পড়ার ফাঁকে কিংবা কাজের মাঝে
দিন দুপুরে খাবার ঘরে, শোয়ার ঘরটা এলোমেলো
ঘুম থেকে ওঠা কিশোরের এলোমেলো চুলে যেমন সকাল লেপ্টে থাকে
আরো কিছুটা ওম, তারপর ধোঁয়া উঠবে চুমুকে এবং
প্রতিদিন মরবে শিশু, আহত রক্তের বীজে ব্যপ্ত হবে মানুষের অকারণ কাম!
এই কী নির্লিপ্ততা? এই কী যাপিত সম্ভোগ? এ কী তবে অভিশাপ?
বেঁচে থাকা আজন্ম পাপ!
তবে তো ফুলেরাও বেঁচে ওঠে! তবে তো উঠোনে ছড়িয়ে থাকে সোনালি ধানের মত স্বপ্ন আহার আর পাখিদের সমস্বরে জাগে সেই নিকোনো উঠোন!
যে চলে গেছে পনেরো বছর আগে, যার শব প্রিতিটি জীবিত সন্তানের আহাজারিতে ভারি করে রেখেছিল মাটি, তার শোবার ঘরটায় ফুটেছে কামিনী
ফুল ফুটেছে তাই ডাহুক ডেকেছিল, শব্দ শুনে নূরজাহান মাঝ রাতে প্রবল ঘেমে ওঠে।
ফিসফিস করে বলে, 'আমি রুই মাছের ঝোলে সর পড়তে দিয়েছি, আর আছে তোমার প্রিয় সব খাবারের বাহার! তুমি আসবা না? খুব ভাল আছ ওই পাড়ে? কাঁসার থালায় বাটি উপুড় করে রাখা আছে গরম ভাত, তাতে ঘি রেখেছি ঢেলে। আমার পরিপাটি খোঁপার উপরিভাগে ফর্সা সিঁথি উঁকি দেয়। পায়ে আলতা, কোমরের বাঁক তোমার সবচাইতে পছন্দের ছিল নাকি? সবার জন্য রাঁধি। কত পাড়ার লোক এলো, গেলো। মা বলে ডেকে খেয়ে গেলো, তৃপ্তির ঢেঁকুরে চৌকির আসন ভরপুর! তুমি আসবা না? আমার ঠোঁটের ভিতরে পান যে শুকায়ে যায়!'
এইসব প্রেম বলে মানো? এইসব ভালবাসা, ভাবি? যে চলে যায় ... তাকে মনে করে করে রাত হয় পাড়!
তুমি বলো 'ভালবাসি!' আমি হাসি ... আমারও উঠোন জুড়ে সারা দুপুর ধান মাড়িয়ে দেয় কেউ, ঢেঁকির ছন্দে তাঁতের শাড়ির ভাঁজ কেঁপে ওঠে। আমার একলা পুকুর ধারে আড়মোরা ভাঙ্গে জ্যোৎস্না আর মনেতে আষাঢ়ের অপেক্ষা নিয়ে ভাবি, কতদিন কাঁথার গন্ধ নেইনি!
যে যায়, সে সব নিয়ে যায়। আমারও ছিল কিছু অধ্যায়! কিছুটা আত্মকথনে থাকে, কিছুটা লোকালয়ে এর ওর কানে, কানাকানি। বিশ্বাস করো, মাঝরাতে আষাঢ়ের পানি টিনের চালায় আর কিছু জল এ চোখেও উথলিয়ে ওঠে।

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

                           ফানুস

গোপনীয় পাপের রসায়নে কিছু মানুষ পরাজিত হয় নিজের কাছে।
মৃতপ্রায় মাছের মত নিষ্প্রাণ চোখে  টুপটাপ তারা-   
ফিসফিস করে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা জল।
সে জল ঘোর অমাবস্যার মত একা;
যেন দীর্ঘ সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে অভিবাসীর একেকটি দল!
যূথবদ্ধ অথচ কেউ নয় কারো দাবীদার!
কোথাও পড়েছে রক্তের দাগ, কোথাও রয়েছে সংসার পরিত্যক্ত।

বিলাসে ভেসে যাচ্ছে আরবের আমিরেরা
খাবার টেবিলে ময়ুরীর ঊরুর মত হৃষ্টপুষ্ট মাংসের আহ্বান!
খরার ভিড়ে সুরার জলসা করছে পান।
সেখানেও পরকীয়া সঙ্গমের মত পাপ-
ক্ষয়ে পড়ে সভ্যতার ক্রমঃ ধারাপাত;  মানুষের নিজস্ব উপন্যাস।

ওখানেই থেমে যাও ... মুখ ফেরালাম প্রবল ঘৃণায়
ভাসমান তুমি এতটা অগভীর ...

ভালবাসাকেও অপবিত্র করে দিলে!  

শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ভাবনা পর্ব

ঘরের ভিতরও আরেক ঘর থাকে। সেই ঘর অলক্ষ্য, সেই ঘর সীমাহীন চ্যুত-বিচ্যূত।
গুটি গুটি অক্ষরের মত, সে অক্ষর প্রাণের বাংলা; বিদেশি বন্ধুরা দেখে চোখ চকচকে অনুভূতি দেয় মুগ্ধতার! বলে- এতো শীতের দিনে রোদের আলোর মত পেলব অথচ ভীষণ উজ্জ্বল!
ভাবনা পর্ব

১।
কোথায় যে পড়েছি, জীবনের সবচাইতে কষ্টের মুহুর্ত হচ্ছে যখন- সন্তান বুঝতে পারে, তার মা-বাবা বুড়ো হচ্ছে! নেপিয়ার রোডে হাঁটতে গিয়ে আমার মনে হল, রোদের স্তিমিত আলোয় ছায়ার আদলে আসলে যে পিছু পিছু আছে, সে আমি নাকি ক্ষয়ে যাচ্ছে আমার সময়?
গ্রীষ্ম ফুরিয়ে এলো, ঝরে যাচ্ছে অজানা গাছের পাতারা। তারা সবুজে সাজবে প্রতিবার, অনেকটা নিশ্চিন্তে মানুষ তাই ঘুমোয়, খোলা রেখে দরজা-জানালা। জ্যোৎস্নায় গা ভাসালে ‘গড্ডালিকা প্রবাহ’ এর অর্থ মনে মনে ভেবে হাসি পায়। কতজনা আর পেরেছে প্রবাহে ভাসাতে গা! আহা! রাস্তায় শুয়ে থাকা ইস্ট ইউরোপিয়ান ভিখিরিটাকে মাঝে মাঝে স্বাধীন মনে হয়! ঈর্ষা কি এর প্রতিশব্দ হতে পারে? 

২।

আমার জন্য মাঝরাত হতে পারে খাঁ খাঁ রোদে ফুটতে থাকা তপ্ত দুপুরও! হতে পারে দিব্যি সকাল। জেগে উঠছে ঘুমন্ত টুকটুকে শিশু, তার নরম গাল টিউলিপ ফুলের মত রাঙা। গেল বছর কাঠবিড়ালির ছবি তুলতে গিয়ে যাদের দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। আর সেই ফাঁকে কাঠবিড়ালি মুখ লুকিয়েছিল গাছের আড়ালে। তারপর অনেকটা পথ হেঁটে আমার জন্য কোল পেতে রাখা বেঞ্চিতে ডুবিয়েছিলাম কিছুটা ক্লান্তি। সেই ক্লান্তিতে পুরনো শহরের রাস্তারও দাগ ছিল দগদগে, ঘাম আর ক্ষোভ! গুমোট গরম শেষে বিকেলের বৃষ্টির মত সতেজ ঘাসে পা ফেলে ফেলে নিশ্চিন্তে কেউ বন্ধক রেখেছিল শরীরের ওম। এইসব সময়ও হয়ে যায় মাঝরাত। কারণ মন তোমাকে মনে করিয়ে দেয়। তোমাকে মনে হওয়া মানে থমকে যাওয়া সব। মাঝরাত না হলে মানাবে কেন বলো!