সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৪

যখন অগাধ সময়, হুল্লোড়ে মাতে
তুমি আনমনে পাতাদের ওড়াউড়ি দেখে
বিস্ময়ের দেয়াল গড়ো!
রাতের অর্ধেক ভাগে ... শীত সবচেয়ে মোহময়
আড়ি পেতে যেই কথা শুনতে চেয়েছিলে
নৈঃশব্দে শিশিরের ঢেউ
টুপটাপ ঝরে পড়ে ...
সেই কথা বলে-
অবিরাম।

সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৪


একটি প্রেমের কবিতা


তুমি আর কতদূরে যাবে?
বলো, হে সুদর্শন!
তুমি পারবে না যে ভোরের আলো,
আমার গায়ের রঙ মেখে তোমাকে ছোঁয়;
তাকে অবজ্ঞা করে, মুখ ফেরাতে!
তোমার ঘুম; দুঃস্বপ্নে ভেঙ্গে গেলে
গলায় খুশখুশে কাশির মাঝে কম্পমান-
সকল ধ্বনিতে আমি বিদ্যমান!
তুমি যেই মেঝেতে পা ফেলে রোজ হাঁটো,
জেনো, ওখানেই পেতে রাখি বুক।

আমাকে মাড়িয়ে তুমি ...
কতশত প্রেমিকাকে চুমু খেলে,
তাদের চোখের বিন্দুতে পেলে
প্রিয় পৃথিবী তোমার!

আমি স্থির হয়ে থাকি
আমার স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণে'র পাঠ চুকে যায়,
তোমার একেকটা দিকভ্রমে।

তুমি কি দেখছো আকাশ?
কিংবা জলের বাড়ি; রাজহাঁস ...
কতবার তোমার জন্য আমি ছত্রে ছত্রে
গুঁড়ি গুঁড়ি মেঘ পাঠালাম।
তুমি সেই মেঘেদের নিমন্ত্রণে পথে নেমে গেলে
তোমার সাঁওতালী চামড়ায়, বৃষ্টির ফোঁটা জমে
একেকটা হীরকখন্ডের জন্ম!
আমি প্রাণপণ সেই ছবি এঁকে
ঠান্ডা বাতাসে ওড়ালাম চুল;
পড়লাম নাকফুল!

তোমার লেখার খাতায়, বিছানায়,
জানলার কার্নিশে, চুয়ে পড়া বিভ্রমে
যে বিষাদ উঁকি দেয় প্রায়শঃ
ওখানে, সেখানে, সবখানে আমারই সে তুমি!

তোমাকে চেয়েছি বলে, দেখো
অবাক আস্পর্ধায় বাড়িয়েছি হাত অজানাতে।
তোমাকে চেয়েছি বলে,
একশো দুপুর আর হাজারটা সন্ধ্যা
একদম পেছনে ফেলে ছুটে গেছিলাম।
তোমাকে চেয়েছি বলে, বলতে পারিনি, কতটা চেয়েছি!
তারপর তোমাকে বাড়তে দেব বলে
বন্ধক রেখেছি জীবন আমার!

তোমার কাজের মাঝে সিদ্ধান্তহীনতা,
স্নান ঘরে ফেলে আসা মোহনীয় শার্ট,
কোমল পানীয়র গ্লাসে দৃঢ় চুমুক,
হাতের দৃপ্ত ভাঁজ, কপালের রেখায়
একা'র অভিযান, কিংবা বিলাসী আড্ডায়-
যাকে যাকে করো আমন্ত্রণ,
তাদের সকলের ফাঁক গলে
আমি চুরি করে নিই, সেই হাসি।
যতবার অন্যের হয়ে আছো,
জেনো, আমি সেখানেই আছি।
যতবার পালিয়েছো আমার থেকে
ততবার ছায়া হয়ে শরীরে শরীরে-
মনের গহীনে, নিয়েছি ঠাঁই। ...




মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০১৪

আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি ...

পিতা'র কথা মনে হলে আমার বাড়ির উঠোন মনে পড়ে
বাড়ির উঠোন ... আশৈশব আমার আহ্লাদ যেখানে স্থান পেয়েছিল
উঠোন ... যে উঠোন আমাকে প্রথম প্রশ্রয় দিয়েছিল ... পা ফেলার, হাঁটতে শেখার।
সেই উঠোন থেকেই তো আমি জেনেছি, স্বদেশ কি করে রচিত হয়!
সেই উঠোন থেকেই আমি জেনেছি, নিশ্চিত ...
ভোরের শিশির কণা, আষাঢ়ের বৃষ্টিস্নাত জল, কাদা-ধূলি'র বসবাস!
উঠোন আমাকে এও জানিয়েছে, মাটির সঙ্গেই মানুষের সখ্য।
সেই মানুষের জন্ম-পরিচয়, সীমানা-পরিধি নিঃসীম আকাশ পেরিয়ে অসীমে।

পিতার কথা আমাকে মনে করিয়ে দেয় ...
গ্রীষ্ম-বর্ষা, শরৎ-হেমন্ত, শীত-বসন্ত
জীবনচক্রে, কালক্রমে এরা আমাকে আশ্রয় দেবেই
পিতার প্রশস্ত বুকের মত ঋতুগুলো আগলে রাখবে আমার যত ক্লান্তি।
আমাকে নিবিড় আলিঙ্গনে ঘুম এনে দেবে চোখে, পরম মমতায়।

পিতার কথা মনে হলে, আমার রোদ্দুর মনে পড়ে
দেবদারু গাছের মায়াময় ছায়ার আড়ালে আড়ালে আমার সঙ্গে হাঁটে যে অহর্নিশি।
আমাকে সাহস যোগায়, আমাকে তেজোদ্দীপ্ত করে ...
মিছিলের স্লোগানে বর্ণের গাঁথুনিতে রক্তে-অণুতে প্রাণ খুঁজে পায় শরীর আমার!

পিতার কথা মনে হলে আমার সবুজাভ দীঘি মনে পড়ে
আহত কিংবা তৃষ্ণার্ত, পীড়িত-ব্যথিত হলে সবুজাভ দীঘির ভেলায়
অশ্রুবিন্দু থেকে পানাফুল জন্মে ...
পৃথিবী বিস্মিত হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে ... উঠোনের কাছে ফিরে আসে। 
বোঝাপড়া ১.

তিনটা সাদাফুল ফুটে থাকে
নতমুখ ... সেই সাদাফুলের কাছে ফিরে
সাদাফুল তার পাশে হারানো সবুজ নিয়ে 
নতমুখের মত নির্বাক।

বোঝাপড়া ২.

একটা পাখি সারাক্ষণ একা
আষাঢ়ের আঁধারে ভিজতে থাকে
নতমুখ ... সেই পাখির কাছে ফিরে।
কালো পাখি আষাঢ়ের আঁধার নিয়ে
নতমুখের মত নির্বাক।
ঘাসের পাখায় পা ফেলে ও মেয়ে হাঁটে, কথা বলে ফিসফিসিয়ে
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে ওকে বহুবার আমি দেখেছি
দুলতে দুলতে সে আপন মনে চলেছে শুধুই দূরে ...
আমি ওকে দূরেই যেতে দেখেছি।
ওকে আর ওই সবুজের মত কোমল ঘাস, যা কেবলি নদীর ধার ঘেঁষে
অগোচরে বেড়ে ওঠে, নিরব গন্ধে বুকের সোনালি নিঃশ্বাসের সঙ্গে করে মিতালি
সেই প্রান্তরে, খোলা হাওয়ায় ও মেয়ে হেঁটে হেঁটে দূরে যায় চলে।
আমার ঘুম ভাঙ্গা কুয়াশা কেটে যায় ওদের হৃদয়ঙ্গমতায়
এভাবে দূর থেকে ওদের মেঘ ছুঁয়ে ছুঁয়ে গল্প করতে দেখেছি আমি।
শুধু একবার রোদ পড়া বিকেলে আমার চোখে ওর চোখ পড়েছিল!

বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ওই দেশে আমি পেঁজো মেঘ দেখেছি
বরফের হিমশীতল আচ্ছাদনের সাথে তাকে তুলনা করনা
ভুল হবে। 
ওই মেঘ কাজল কালো চোখের ভেলায় ভাসমান সাদা অংশের মত বরং
গহীনে অতল, কিন্তু ডুবে যেতে ইচ্ছে করে।
ওই মেঘ সিঁড়ির মত ...অতলান্ত।

শৈশব মনে পড়ে?
আমাদের নরম সবুজ মাঠে একত্রে দাঁপিয়ে বেড়ানো?
মাঠের শেষ ভাগে বিকেলের আড়িপাতা রোদ্দুর ক্রমশ মূর্চ্ছা যেত ...
আমরা সতেজ পাতা'র সন্ধানে অভিযাত্রী দল যেন ঘোড়ার তেজ নিয়ে ছুটেছি!
কিন্তু আমাদের সাহসী পদক্ষেপের প্রতি কণায় ঘাসের গন্ধ ছিল।
হাল্কা ধোঁয়াটে বাড়িগুলোর দরজা খুলে গেলে যেন ঠিক ইভানুষ্কা-মারুষ্কা হাজির হত, জানতাম নিশ্চিত।
যদিও দেখা হয়নি, শুধু রাতঘুমে ওরা পথ বাতলে দিত।

সেই পথের সন্ধান আজো মেলেনি ...
সেই নরম সবুজ পাতা মাঠ থেকে শুরু করে
আজন্ম অধরা মেঘের গভীরে সন্ধান করে করে
সন্ধান করে করে ... নিশুতি রাত ... রুপালি চাঁদ ... আলোমাখা সোনারোদ ...
সকল সাক্ষী করে ছুটছি ...

সেই পথের সন্ধান আজো মেলেনি!


২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
লন্ডন।

বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ভালবাসাকে যদি কেউ ভালবেসে ফেলে,
সে সমস্ত জীবনের তরে অভিশপ্ত হয়ে যায়।

ফুল ফোটা দেখে সে আবেগে হেসে ফেলে,
চুলায় আগুন জ্বলে দাউদাউ দাবানল।
খাদ্যদ্রব্য পোড়ে ... লোকে বলে, মুখপোড়া, হতচ্ছাড়া, যাযাবর।

গাঙ'য়ের জোয়ারে সে স্বর্গরশ্মি খোঁজে
সূর্য্য থেকে নির্গত ... 
ভেসে যায় কাঠের ভেলা
অপরিচিত, একমাত্র সাঁকো নড়বড়ে ঠেকে বিভিন্ন চোখে।

ভালবাসাকে যদি কেউ ভালবেসে ফেলে
শূণ্য হয়ে রয় তার মনের উঠোন! ...

১৩।০২।২০১৩
লন্ডন