মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭


মানুষ তারপর

মানুষ তারপর নিজের দিকে তাকায় নিজেকে নিয়ে ভাবে, নিজের জন্য ভাবে। ভোর এসে গেলে হঠাত ভেঙ্গে যাওয়া ঘুমে কোন এক জড়তা মিশে থাকে। ভুলে যেতে থাকে গন্ধের নাম। গন্ধের নাম কি মনে রাখা যায়? কারো শরীরের, কারো প্রস্থানের, কারো বেদনার? এক ভোর হাতে নিয়ে আকাশ রঙ বদলায়। নীরব রাস্তায় এরপর একটা দুটো করে আরো মানুষেরা রিক্সার টুংটাং, ধূলারা তখনো পরিত্যক্ত নয়। তখনো চোখের পরিচয়ে কেউ কেউ হাসে। কেন হাসে? কেন দিন হেরে যায়? কেন মানুষ আর কাউকে চেনেনা? সুবোধ কেন পালায়? একটা বীভৎস পরাজিত দিনে মানুষ অতঃপর নিজেকে বাঁচাতে নাভীশ্বাস। কোথাও সময় থাকেনা। আলো থাকেনা। নিজস্ব যুদ্ধে হারতে থাকা জীবন্ত আত্মারা সব- এরকম করে ডুবে যায় কেন ডোবে?
আশ্চর্য পাপ
- তানজিনা নূর-ই সিদ্দিকী

ব্যাথা, নৈঃশব্দের শিশু
স্মৃতি ধ্যান, বিনম্র ঈশ্বরে স্থির-
অবশ্যম্ভাবী।
অমোঘ আনন্দে ঠাঁসা আশ্চর্য পাপ।
এতে নিমগ্ন হও, ডুবে যাও।
সমস্ত শরীরে নামাও শুভ্রবসন।

আমাকে ফেরাও বিষণ্ন ঢেউয়ের
বিরামহীন বিশ্রাম থেকে।
ওষ্ঠের তাপ মাটিতে লুটাক-
ধূসর ক্ষীণ মেঘ, শীতকাঁথা।
আর, অমন করে হেসো না।
মনে রেখো, হেসো না।
হাসলেই আনন্দ অশ্রু
হাসলেই ভাঁজ খোলে-
কাপড়ের আড়মোরা;
কেবলই ভাবতে থাকি,
পৃথিবী সুন্দর!
অথচ দু'চারটে লাশ রোজ ভাসে
অথচ ফেরার পথে অনিশ্চয়তায়
পকেট ফাঁকা।
অথচ মাসের মধ্যভাগে শূন্য হয়ে যায়
অনেকের বুক।
ভারি নিঃশ্বাসে বৃত্তবন্দী বাতাস।
খোলসের ঘরে দুমড়ে মুচড়ে যায়
খবরের চাকা।

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বাতাসের আহ্লাদী আচারে যে মুহূর্তে চুল উড়ে উড়ে যাচ্ছিল যেন শাড়ির আঁচল, মায়াবী-কোমল, যেন রুক্ষতা নেই পৃথিবীতে আর, যেন ঢেউ গুনে গুনে আছড়ে পড়ছিল পায়ে ... প্রশান্ত, সুধীর বিকেলের মত, ছায়া-ছাই রঙে অপারগ অতীতের সানাই। তখনই কোমরের ভাঁজে ভালবাসা রেখে হাত বলল এগিয়ে যেতে ... যেতে যেতে কিছু দূরে, ফিরে দেখলাম, মৃতপ্রায় মাছের চোখের মত সেই মুহূর্তটাও ... রাঙা মুহূর্তটাও, শুয়ে আছে!
For I have passed countless times without my darling daughter and realised
Nothing in the world is more tougher than the very thought of not being able to touch and stay with her! 
So in prayer I sent fairies, 
And told them that they kiss her forehead and let her know that I am there. 
I am there when she cruises, when she smiles 
I am there when she seeks for me
I am there when she plays with toys and can't express what she feels for me.
অন্ধ তোমার গায় 

আমাকে দেখো না তুমি? 
দেখি না তোমাকে আমিও!
সত্যি বলছি তাই 
ঘোর জ্বর আসে। 
ভুলতে ভুলতে নামধাম সব
হাত রাখিনা কপালে ভুলেও!
কোত্থেকে যে কোথায় পালায়
স্মৃতির শহর!
ধূসর বিকেল; দিন মরে যায়।
অন্ধ তোমার চোখের দ্যুতি মনে পরে
অন্ধ তোমার গায় জড়িয়ে উজ্জ্বল রঙ
অন্ধ তোমার সাঁওতালি গায়
ছুটছে কিছু প্রজাপতি
ভাসছে হাওয়া ব্যস্ত দারুণ
আমার হাতে, তোমার হাতে!
এবার আবার থমকে দাঁড়াই
মিষ্টি মদির আসছে কিছু ধেয়ে
আবার আমি লাজুক হবো
দেখব না আর চেয়ে।

বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭

মাঝেমাঝে এইসব রাতে, মধ্যরাতে ... যখন বৃষ্টির ভাঁজে ভাঁজে জড়তা খুলে দেয় মেঘ, সদ্য শুরু দাম্পত্যের শয্যায় প্রেমের সঙ্গে কাম লুটপাট হতে থাকে ছেদে-বিচ্ছেদে ... তখনই জীবন বিষণ্ন যেন, পুরনো সে খেলা এক উঁকিঝুকি দেয়, মনের এদিক সেদিক। যেন পাতায় পাতায় বিস্মরণ, যেন হাওয়ায় হাওয়ায় মগ্ন থাকে করজোড় মিনতি কারো, যেন দগদগে ক্ষতের মত মলাটে সজ্জিত গন্ধ- উন্মুক্ত করে রাখে কোনো বই, যাকে যত্নের ভ্রূকুটি ভেঙ্গে পড়া হয়নাই। অথচ বারবার বিবস্ত্র ঠোঁটের আলিঙ্গন ঘোর বর্ষার কথা বলে; অথচ চৌচির মাটি তার সমস্ত শিরা উপশিরায় মেখে রাখে সেই প্রচন্ড বর্ষণ! 
এইসব মধ্যরাতে আবার দমে যায় কেউ, আবার ভেতরে পোড়ে ফসিল। অথচ তারা মগ্ন রাতভর মানুষ তৈরির আয়োজনে! ... অথচ পৃথিবীর আদ্যোপান্তে, মোড়ে মোড়ে অপেক্ষায় কাঁপছে যুবক, তার উজ্জ্বল চোখে ম্লান ম্রিয়মান হতে থাকে একেকটা দিন। 
... অতঃপর কেউ তো ফেরেনা!

রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ভাবনা পর্ব ৩

অন্তরে গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ
আমি আর কোথাও যাব না
ভুল করে আঙ্গুলে রাখব না হাত
অভিমানে ভিজবে না গাল
নেব না নরম রোদের মোলায়েম আদর
নতজানু হয়ে, যদি না ফিরে আসি ঘরে।
অন্তরে হেমন্ত শীত বসন্ত
হলুদ পাতার ঘ্রাণে ম্লান বিকেলগুলোয়
ডানা ঝাপটানো সাদা কবুতর
সুর করে ডেকে গেলে ঊঠানে উনুন জ্বলে
তুফান পেছনে ফেলে অকস্মাৎ
যদি না ফিরে আসি ঘরে

অভিমানে ভিজবে না গাল। 
স্বীকার




কারণটা খুব ছোট্ট ছিল
বাড়ি ফিরতে ফিরতে কিংবা না ফিরতে ফিরতে
মাথার উপর আকাশে
একটা প্রকান্ড চাঁদ ঝুলে থাক
কালো পিচে মেখে দিক বিশ্রামের গন্ধ,
নিরবতারা সবাই ঘুমাক।
সরব না থাকুক লোকালয়
আমরা হাত ধরে ধরে কিংবা না ধরে ধরে
বসে থাকি নিরাকার ছায়াদের মত
ঠোঁটে বর্ষণ হোক
পৃথিবীতে বৃষ্টি নামুক।  

কারণটা খুব ছোট্ট ছিল
শ্যাওলা ফুটে থাকা পুকুরের জলে
পা ডুবাক সবুজ শাড়ির পাড়
ভিজুক পাতারা সলাজে
ধূসর বিন্দু থেকে জন্ম নিক আগুনমুখো
রিক্সার টুং টাং শব্দের ঘোরে জ্যাম লেগে গেলে
চা-এর আড্ডায় হয়ত শেষ চুমুক
মন মন্দিরের মেঘ চরাচরে
হুড়োহুড়ি মানুষের দল পাতার আড়ালে গোঁজে মুখ
আহবানে প্রচন্ড উত্তাপ নিয়ে
ঠোঁটে বর্ষণ হোক
পৃথিবীতে বৃষ্টি নামুক


একটা গল্পের শুরু থেকে শেষ হোক নিজেদের  মত। 
বসন্ত এসে যায়,
দেখি পলাশ, শিমুলের রক্তগঙ্গা আকাশে ভাসে 
আমার স্বপ্নগুলো হলুদ হয়ে যায়
নারীর শরীরি গন্ধে ভরে থাকে স্বপ্নেরা 
ঘুরে বেড়ায় ছবির হাটে, চারুকলায়, বইয়ের উদ্যানে 
আমি খুব ভোরে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখি
তখনো কুয়াশা কাটেনি এ শহরে।
মোড়ের কনফেকশনারি খুলতে আরো কিছু ঘন্টা বাকি।
তারপর এক দুই করে মানুষে ভরে যাবে শহরের অলিগলি
তারপর পিঁপড়ের মত তারা ছুটবে সন্ধ্যা অবধি
এ নগরীতে সন্ধ্যাটা ইদানীং তাড়াতাড়ি আসে।
বরফের মত ঠান্ডা লেগে থাকে গলায়, কানে, নাকে
আমরা নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যাই।
আমরা সন্ধ্যা নাগাদ মনে করতে পারিনা
বসন্ত এসে যায়।
বসন্ত এসে গেলে কেন যেন মনে হয়
ভালবাসা ভালবাসি তাই ভালবাসিনাই।
ভালবাসাকে ভালবেসে তাই ভালবেসে যাই,
ভালবাসতে চাই ...
বইয়ের উদ্যানে পাশাপাশি বসে থাকা খোলা চুলে কেউ
ঘামে ভেজা ভীরু হাতে সেই চুলে বুলিয়ে আঙ্গুল
নারী হাসে মৃদু; আমিও মুচকি হাসি
ভালবাসা ভালবাসি তাই।
দেখি, ফুলের সমাগমে বসন্ত এসে যায় তাই
হলুদ শাড়ির ভাঁজ খোলে নারী
হলুদে সবুজ, হলুদে লাল; নীল; কালো
হলুদে সাদা আসমানি দেখে দেখে
ভীষণ আফসোসে ভাবি
বসন্ত এসে যায় তাই
সে নগরে ফুল, পাখি সব গেয়ে ওঠে
সবাই চোখে চোখ পেতে হাসে
সেদিন সেই মধুর উৎসবে একাকী আমার কিছু স্মৃতি
ছড়িয়ে রাস্তায়, ফুচকার দোকানে, নৃত্যের তালে ডুবে রয়।