সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১১

আজ বড় ইচ্ছে করছে জল দিয়ে ধুই দ্বিধা,
জলগুলোকে মুছে ফেলে লাল সড়কের রাস্তা ধরে
হেঁটে হেঁটে চলে যেতে দীঘির জলের কাছে
সেই পুরনো আমার হাসি, সেই পুরনো দিনের বেলা
এক সে বসা সবুজ শাড়ি, তোমার শরীর নীলে ঢাকা।

মনে তোমার পড়ছে নাকি, বলো ... !
রোজ রোজ সেই ইঁট-সুড়কি'র পথ পেরিয়ে
আসতে আমায় নিতে
তোমায় দেখে এক নিমেষে হারিয়ে যাওয়া আমি
কেমন মিলিয়ে যেতাম শ্যামলা ত্বকের মায়ায়!
কোত্থেকে যে আসতো অমন দিক হারানো হাসি!
ভুলে যেতাম, তুমিও দিতে ফাঁকি।

এমন করেই কাটতো আমার বেলা
তোমার চোখে, তোমার দেয়া শোকে
তোমার আমায় ভাসিয়ে নেওয়া হাজার অনুরাগে।
তোমার লেখা কথার মায়া, রোদ পোড়ানো হাসি
তুমি তো ঠিক জানতে, আমি তোমায় ভালবাসি!

মনে তোমার পড়ে সেই গুমোট দুপুরবেলা
চোখের তারায় লেপ্টে দিলে যত নিরবতা?
বললে, তুমি থাকবে আমার পাশে
দিন কাটাতাম সেই ভরসার আশে ...

তারপরে সেই এল কালো মেঘ
কালো তোমার প্রিয় বলেই
জড়িয়ে নিলে তাকে?
আমি পুড়ে কালো হলাম কালো'র দেয়া শাপে!
তুমি আমি পেছন ফেলে যত শত ছন্দ
মরছি এখন জীবন খুঁজে, বিষাদে উদ্ভ্রান্ত!

আমাদের সেই দিন,
আমাদের সেই ভুলে ভুলে মিলে যাওয়া
এক জীবনের সাধ, মিটবে কি আর অন্যে?
জীবন করে মৌন মিছিল, হন্যে।

দ্বিধা এখন একঘরে সুখ, সেই পুরনো বাস
তোমার দেয়া নতুন জীবন, করে হাঁসফাঁস.
তুমি কিছুই মানবে না এর জানি
হয়ত জীবন তোমার কাছে
আমার একেক আসার থেকেও
বেশি আরো নতুন কিছু, আরো অনেক দামী।

তবু আমার ইচ্ছে করে আজ
জল দিয়ে ধুই দ্বিধা।
তোমার এখন সবাই আছে,
আমি আজো একা ... ।


রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১১

অন্ধকার নামে অতল এক পাখির ডানায় ভর করে
চলছি করুণ নগরীর নামে অনামে ঠেঁসে চলা রাস্তায়
প্রতিমুহূর্তে পেরিয়ে যাচ্ছি সময়ের গতি
হিম অসাড় হাতে মুঠোভরে ধরেছি তাকে
সে উড়ে চলেছে ... মাটিতে হোঁচট খাচ্ছে-
আমার অনভ্যস্ত পা, কখনো টালমাটাল হাতের আঙ্গুল্গুলো।
অন্ধকার পাখির পেছনে আঁধার
তার সামনে, ডানে-বামে আঁধার
উপরে নিচেতে আঁধার আর আমি-
উলটে যাচ্ছি, সামলে নিচ্ছি, গিলে ফেলছি দ্বিধা, উল্লাস, ভয়।
অন্ধকার পাখিতে, আঁধারে মিশে আছি
বিষাদে ধুয়ে নিংড়ে নেওয়া বিশুদ্ধ নির্লিপ্ততা মেখে।

 

শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১১

রাতের মায়ায় ভুলে গেছিলাম
সকালে ঠিক ভুলে যাই
ভাবনা'রা এসেছিল ...
এখন ফকফকে সাদা দুপুরে
শত চেষ্টায় বুঁদ হয়ে থেকে
ভাবছি তাদের
ভাবনা'রা এসেছিল, জানি
শুধু ওটুকুই অবলম্বন
আর তারা আসছেনা ফিরে
করি কি এখন!

কাঙ্গালের মত বসে আছি
হাঁটছি আহত পায়ে
উন্মাদ, ভ্রমণে শব্দের দেশ
ওরা আর আসবেনা ফিরে
এই ভাবনায় নিঃশেষ।
একবিন্দু সময় নিয়ে
হুট করে যে আসো তুমি
যখন আসো ... তখন আমার
চোখ পড়ে যায় ঘুমে
তুমি জানো ... তবু
অমন করেই আসো!
এই আসাটা সারাবেলায়
এখন তখন যখন ঘটে
তখন আমার চোখ পড়ে যায় ঘুমে!


কে যেন আসে রোজ
নিয়মে না অনিয়ম মেনে,
কে তা জানে!
জানতে ইচ্ছে করে খুব ...

টুকরো টুকরো অবসরে
জড়ায় না বিগত কোন শোকে
আসে আর যায় নিরবে
কে যে রোজ আসে!
কে তা জানে?

ঘুমোতে যায় যে বিছানা,
ঘুম থেকে ওঠে প্রতি ভোরে
কথারা হারিয়ে যায়
কথারা এসে যায় গোপনে

এসে রোজ পড়ে থাকে কথা
গোপনে সে এসে জানে সব
জানিনা সে আসে রোজ গোপনে
... জানতে ইচ্ছে করে খুব
কে তা জানে?

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১১

কাল সেই আশ্চর্য্য সন্ধ্যাকাশের
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কোন ভাবনায়
নিরিবিলি বিলি কেটে দিচ্ছিল নিশ্চিদ্র কাল?
হাতের পাশেই পড়ে থাকা শুণ্যতা
গভীর, নিরব মনের সয়ে যাওয়া দিনলিপি
চুপচাপ শিশিরের বয়ে যাওয়া
আর আবেগে ফেঁপে ওঠা দেহের বিশালতায়
বহু জীবন পোড়া ছাই মুঠোবন্দী করে
একই এই আকাশের সামনে দাঁড়িয়েও
কেমন অসহায় বোধ হল!
এক এক করে কোটি তারা
স্থির চোখে দিয়ে যায় দেখা
আর যেভাবে জ্বলে ওঠে যেন
খন্ডে খন্ডে ভাগ করে দেয় বোধ,
অবোধ সুখী মানুষের অনতিক্রম্য মগজের
ভেতর থেকে মিটিমিটি ...
এক এক করে হাসতে থাকে সব
অট্টহাসি ছড়িয়ে পড়ে
আকাশের নিচে, মাটি ফুঁড়ে বেড়ে ওঠা
ঘাসের বুকেতে পড়ে আছড়ায়।
অবশেষে সেই ক্লেদ, ক্লান্তি
পাশাপাশি আকাশের ছায়া পেছনে রেখে
ক্রমশ হারিয়ে ফেলা জীবনের ভারে ন্যুব্জ
একা ...




রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১১

মেঘহীন আকাশে যেমন শুধু নীল
ঘোর লাগানো শূণ্যতার নীল
মাছরাঙ্গা পাখি'র পালক থেকে
ধার করে নিয়ে যাওয়া নীল
আর গমগমে দিন-দুপুর
শ্যাওলা সবুজে টুপ করে খসে পড়া
নীলের ভূমিতে ভাসে সে প্রথম নীল
আমার শেষ নীল ...

মৃদু বাতাসে উড়ে যায় নীল
নীল বসে থাকে ঘাসের পাশে
মেহগণি গাছের সারি'র ফাঁক গলে
চুয়ে পড়ে নীল।
মেঘের রাত থেকে চুরি করে নিয়ে আসে
নীলরঙ জ্যোৎস্নায়
একাকী আবেগে বেড়ে ওঠা বৃষ্টি নীল।

নীল আমাকে বুঁদ রাখে নেশায়
নীল আমাকে একা করে রাখে
নীল আমাকে ভুলতে দেয়না নীল
নীল আমার পাশে পাশে থাকে
নীল আমাকে ছেড়ে দূরে যায়
নীল পড়ে থাকে আমার জানালা'র পাশে
নীল আমায় দেখেও দেখেনা
নীল, চোখে আমাকেই শুধু দেখে
নীল উন্মত্ত করে তোলে
নীল শান্ত করে দেয়
নীল আমাকে হারিয়ে ফেলে
নীল আমায় আমৃত্যু নীল করে রাখে ...


শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১১

দুঃখ প্রকাশের ভাষা নাই জানা
যখন তুমি আর আমি এক বিন্দুতে এসে থামি
অথচ জীবনের বাঁক গেছে ঘুরে
আমরা প্রতিনিয়ত বসে থাকি মুখোমুখি দু'জনের
করি বিষপান যাপিত সময়ের
একদিনের ধৈর্য্যহীন সময়ের ফেরে
বাঁধা পড়ে গেছে প্রেমের প্রকাশ!
এ কেমন সংসার, এ কেমন পৃথিবী?
ভুল গুলো ঠিকঠাক পেয়ে যায় স্থান
ভেতরে কুঁকড়ে মরে দুইটা জীবন।

এইসব সামাজিক বাস্তবতা অবাস্তব মনে হয়
এইসব ভুলে ভরা দেয়ালের কাঁধ টপকে
চলে যেতে ইচ্ছে করে দূরে আরো দূরে
দেয়ালের আরোপিত বাঁধনের বাইরে নিতে ইচ্ছে করে সুখ
তোমার হাতের শৃংখলিত তরঙ্গে।
তোমার চোখে ডুবে যেয়ে ভুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে
বিষাক্ত বিষাদ।

কেন সময় দেয় না সময়,
কেন সময় দেয় না মুক্তি,
কেন সময় করে না ক্ষমা?
কেন বেঁচে থাকা হয়ে যায় মৃত্যুর মত!




বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১১

এক দিনের ব্যবধানে ছুঁয়ে দিলে আকাশ তোমরা
তোমরাই তো পারো তবে ফেরাতে পতনোন্মুখ মানুষের মন
কেন তবে ঝরে পড়ে রাতের বাতাস নিঃসহ যন্ত্রণায় কাতড়ে!
এক তুড়িতে শুকিয়ে ফেলতে পারো নোনতা জল, গুমোট তান্ডব
কেন তবে ফেরাও না হারিয়ে যাওয়া পাখি'র পালক শরীরে?

ওই যে দূরে ছিটিয়ে থাকা শব্দমালা কাঁদে, ডাকে
নিশ্চল মন অনড়, অবশ তাই হেলায় বেড়ে ওঠা শরীর আর ত্বক
মৃত চোখ স্থির অবিচল আড্ডায়
হাত বাড়ানো অস্থিরতায় শান্তি খোঁজেনা।
গোঙ্গানো অতীতে আড়মোড়া ভাঙ্গে পংক্তিহীন তেলাপোকা'র মত!

তোমরা পারো, আদরে গ্রহণ করতে নিষিদ্ধ জঞ্জাল
বর্তমানে  খুঁড়তে পারো ব্যস্ততা'র কবর
কেন তবে আরো একটু বেড়ে ওঠোনা? আরো একটু হাত বাড়াও
ফিরবে পতন, ফিরবে মানুষ, এক থেকে হবে সহস্রাধিক।
মানুষ ফেরাও ... আকাশ বানাও আকাশে। 



বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১১

যে বৃষ্টি শীত নিয়ে এল
আমি তাকে ছুঁয়ে বলছি
কোন অন্তরঙ্গ ঢেউয়েরও সাধ্য নেই
টলায় এই অসমাপ্ত প্রতিঞ্যা আমার।
আর যদি না আসো তুমি এখন ...
তবে এই যে বন্ধ হল অন্ধ চোখ
খুলবেনা আর তারা শত ছলনায়।
দুর্বিনীত সন্ধ্যাকাশে একটি তারা'র রাতে
ফুটিয়ে নিলে হাজার তারা, রুপা'র জোনাকী
কোন পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলে
উষ্ণতা আর ওমের রুপে অগ্রহায়ণে-
বৃষ্টি হয়ে এলে!
এক বর্ষায় ভাঙ্গেনি যে ঢেউ মাতাল
অন্ধকারে চেপে প্রলয় নিয়ে এলে
ক্ষেত মাড়িয়ে, বন পেরিয়ে, অসীম ক্ষমতায়!
এনে দিলে ঠান্ডা হাওয়ার প্রলেপ লেপা রাঙ্গানো আদর।

মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১১

জীবন আর চলমান মানুষেরা
যা বলে যায়, সব তার মিছে!
কোথায় রাখবে যক্ষের ধন
তোমার থেমে থাকা জীবনের
গোপন সরলতা?

যদি একেই বলে ভাল থাকা
তবে আমি ভালই আছি বেশ!
গুছিয়ে রাখছি ঘর, আসবাব
বেরিয়ে পড়ছি রোজ কাজে
আমার শারীরিক দেয়ালের কোথাও
এমনকি আঙ্গুলের কোন কোণে
জমে নেই কেটে যাওয়া রক্তের দাগ।
আমি সত্যিই ভাল আছি বেশ!

যদি জানতে চাও তারো গভীরে
তবে আমি তাড়িয়ে দেব তোমাকে
তোমাকে দূরে সরাতে,
তোমাকে ভোলাতে আমি ভাল আছি কিনা
জানা আছে সব কৌশল
তাতেও যদি না থামো তুমি
চোখ ফেরাবো পলকে।
কারণ, আমি ভাল আছি বেশ!

শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১১


চোখ পোড়ানো সুন্দরে চোখ পড়ার আগে ফেরাতে পারিনি চোখ
যদি জানতাম, তারপর এভাবে পুড়বে মন;
তবে চোখকে সাবধান করে ফিরে যেতাম!
ফিরে এসো। কোথায় গিয়েছো চলে?
আমি আসিনা তোমার কাছে, দেখিনা তোমাকে
তবু তো রয়েছে বাকি আরো ঢের ...
কোথায় গিয়েছো চলে?
আমার একা রাতের গল্প বলি আমি কাকে?
কে শোনে চাপা দীর্ঘশ্বাসের পতন,
শিশিরের শব্দের মত!
ফিরে এসো, তোমাকে দেখিনা, আসিনা তোমার কাছে
তবু রয়েছে বাকি আরো ঢের।
নিরবতায় লুকিয়ে থাকা আমাকে
পড়তে  তুমি এসো
একা এই পৃথিবীতে তোমার আর কিছু নয়
উপস্থিতি বড় প্রয়োজন ...
তুমি আছ সেকথা জেনে কাটবে জীবন বেশ
... ফিরে এসো।


[জীবনের বাঁকগুলো এত অদ্ভূত ঠেকে! কোথায় যেন কার সাথে মিলে যায় সব হারানোর পরে, এমনকি সময় হারিয়ে! ... পৃথিবী তো চলে ঠিকঠাক, জীবনের গতিও ... শুধু সময় হারিয়ে মিলে যাওয়া পথেরা মিলেনা কখনো। তেমনি কোন জীবনকে ভেবে  ...]
তোমার বাদামি তারা'র চোখে চোখ পড়তেই
চমকে উঠেছিলাম আমি ...
সূর্য্য থেকে উৎসারিত আলোয় বিষাদে-
সুন্দর, মায়াময় যত্নে, পবিত্র প্রেমে ভরা চোখ
আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল কিছু আগে ঘর ভরে
ফেলে আসা কষ্টের কথা!
পুরো এক বিকেল জুড়ে তোমার
বাদামি তারা'র চোখ আমায় ফেরাতে দেয়নি চোখ!

সেই ক্ষণের অপেক্ষা করতে হয়না
গ্রীবা উঁচিয়ে জানান দেয় প্রেতেরা
পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার
প্রাণপন যে চেষ্টা বর্তমানে বাঁচার
যত চেষ্টা ভুলে যাবার সব কালো ক্ষত
তারো আগে আগলে দাঁড়ায়
সংকোচে লুকিয়ে রাখা যন্ত্রণা
হাড় মাংস নিংড়ে, রক্তের অণুতে
বপণ করে বীজ প্রতিবার
জন্ম নেয় নতুন আরেক শোক ...
জানান দেয় তারা আছে বেঁচে!
বুক পোড়া আবেগের বাতাসে
কষ্ট ছাইয়ে খেই হারায় শূণ্যতাও।
পুরনো চাকায় পিষ্ট হয় সহজ প্রকাশ
অপ্রকাশিত কবিতায় ...

রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১১

ইচ্ছেগুলো ভুল দিয়ে ভরে দাও
ইচ্ছেরা বুঝবে তোমার ভুলগুলোকে
মনগুলোকে ...
যেমন বোঝে স্বপ্নেরা ...
ঘুম ভাঙ্গা চোখেও লেগে যায়
চোখের পাতায় ...

শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০১১

-তুমি এখন কোথায়?
-জানিনা!
-তোমার ঘরে কে?
-আমি ...
-এসো, আমরা কথা বলি, করি রাত পাড়।
-কথা?
-হ্ম ... কেমন আছো?
-ঘরকে প্রশ্ন কর ... এই ঘর জানে আমার সবটা
যেটুকু আমিও জানিনা!
-ঘর কি বলবে আমায় জানতে যা চাই?
-না, ঘর বলতে পারেনা, ওর বুকে কান পাতো
শোনো আর বুঝে নাও, শীতলতা, নিরবতা।
-কিন্তু আমি যে জানতে শুধু চাই, তুমি কেমন আছো?
কি তুমি ভাবছ, কেমন করে কাটছে তোমার বেলা!
-তোমাকে আমি কিচ্ছু বলব না ...
যে রাখেনা আমার একা ঘরের খোঁজ-
যে কিনা আমার জন্যে জেগে থাকে অহর্নিশি
তুমি যে বোঝনা তাকেই!