শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১১

নতুন কিছু লিখব করে
ভোর থেকে বসে আছি আলোর অপেক্ষায়।
সূর্য্য ডুবে গেলো, এ রাতের প্রথম প্রহরে
চাঁদের এক চিলতে বেড়ে ওঠা অবয়বে
পেলামনা আলোড়নে তুঙ্গস্পর্শী ডাক!

জানি, গ্লানি মুছতে তৎপর মুখরতায়
একেকটি দিন আসে তাই
দিনের হিসেবে গা ভাসিয়ে চলা ব্যাস্ততায়
নেই মুহূর্ত এমন
যাতে মানে নিতে পারি, নতুন তো আদতে মেলেনা কিছু।
আমরা ভুলতে চাই নিজের অপারগতা, তাই
পুুরনোর জোয়ারে আরেকটি  িদনের আগমন মিলিয়ে
মনে মনে নতুন সাজাই।

আয়নায় দেখা যায় কতদূর?
নতুন এলো বলে যত্রতত্র যাত্রায়
উন্মাদ নাচন শেষে, যার আছে ঘর, সে ফেরে।
যার নেই ঘর, সে শুয়ে পড়ে, পরিচিত গাছের আড়ালে।

নতুন দেখব বলে কাল ঠিক বেরুলে রাস্তার শেষে
ভিখিরীর নোনা চোখ দেখি
ভয় নিয়ে সয়ে যাই আসন্ন সংকট।
যে ধূলো বাতাসে ওড়ে,
তাকে তাড়িয়ে নেওয়া মানুষের দলে
জীবন খুঁজি, নতুন খুঁজি ...

মূর্খ তর্ক করে, সয়ে যাই
মূর্খ গালি দেয়, সয়ে যাই
মূর্খ বড়াই করে  ...
নতুন দেখব বলে
তার চোখ খুলে যাবে, সে আশায়
হারাই আশৈশব লালিত স্বপ্ন,
হারাই চেতনা, হারাই অভিমান, হতাশা ... ভুল!

নতুনের আস্বাদ পাব তাই,
ভোর থেকে বসে আছি ...
ভাবছি অন্যের মাঝে মিশে গিয়ে
ভাবছি নিজের সময় নিয়ে
নতুন তো মিলছে না কোন! ...

মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১১


কতকিছুই তো দেখবনা বলে পাশ কেটে যাই
শুনবনা ভেবে দৌড়ে দূরে সরি।
পারিনা ... পেছন থেকে ঠিক ধরে রাখে
কোন এক ভেতরের ডাক।
নিজেকে ভারমুক্ত যেমন করতে পারিনা
বিষাদের প্রতীয়মান অস্তিস্ব থেকে
তেমনই হয়না ভাল থাকা তাই।

আমার চোখ পড়ে যায়
মন পড়ে রয় ...
এতে যদি বল, আমি সহজে সুখী নই, মেনে নেব।
মেনে নেব, কারণ, ভেতরের ডাক উপেক্ষা করে
সুখী হতে পারিনি কখনো।
বরং, পরিচিত বিষাদেই বড্ড ভাল থাকি।
কিংবা এও ভেবে নিতে পারো,
তোমার অভ্যস্ত সুখে আমি আমাকে দেখিনা
পাইনা খুঁজে আমার অনভ্যস্ত সুখ।

এবার বল তবে, কি নিয়ে এলে?
কি দিতে পারো আমাকে তুমি?
সুখ? ... দুঃখ!!
পরিচিত অভ্যস্ততা ছাড়া
আমাকে আর কিছুই কি দেবার আছে তোমার?

বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১১

আকাশ দেখার সাধ নিয়ে
রয়ে গেলাম অন্তরালে।
এখন সেই অপূর্ণ চোখে লেপ্টে গেছে শূণ্যতা।
আকাশ কখনো নীল মনে হয়
আর শূণ্যতার রঙ দিতে পারিনা।

বিচ্ছিন্ন ও অভিন্ন একই বেঁচে থাকায়
কোথায় যে রয়ে গেছি আমি!
কোথায় আমি যে রয়ে গেছি,
আমি যে রয়ে গেছি কোথায়?

কখনো কোথাও কোনদিন দেখতে পেতাম
একটু অবসর, মুখোমুখি আমি আর আমি
জেনে নিতাম ঠিক কোথায়, কোন কোণে
কোন পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যায়
আমাকে ...

এবং বেঁচে উঠতাম ...



রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১১

আমাকে বিশ্রাম দাও ...
কেন বোঝনা, যে তাপে পোড়েনা চোখ
সে তাপে জ্বলছে মন, শক্তিমান দুরাশায়।
চোখকে সইতে দাও, মনকে থাকতে দাও
কিছুটা সময়, আরো কিছুটা সময় ধরে একা।
আমি যে মুখের মায়ায় বাঁধি ঘর
যার হাত ধরে কুড়াই শিশির
যে আমাকে করে সুন্দর, গড়ে মানুষে
তার দিকে তাকাবার আরো দাও
কিছুটা সময়!

এরপরে যেই ধূলো আসবে পথে
এরপরে ক্ষেতে ফুটবে সর্ষে ফুল
সেই পথে যাব ...
আরো আরো কথা বলে
ক্লান্তিতে, বিষাদ লুকিয়ে
হয়ে যাব প্রেম কতবার!

কিছুটা সময় ধরে থাকতে দাও একা
সুখ জেনে সরে যাই দুঃখের হ্রথে
তারো আগে, হয়ে নেই প্রস্তুত
একা দাঁড়াবার ...

শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১১

পৃথিবী'র ছায়া কি অপরূপ চাঁদের উপরে!
দেখলাম, অপলক চোখে ...
এই যে গ্রহণের কাল, এই সুবিশাল বাঁদুড়ের
এলোমেলো ডানা ঝাপটানো ...
অসীম আকাশ আর দূর থেকে ভেসে ওঠা নিয়ন আলোয়
তোমার অবিরাম বলে যাওয়া কথাগুলো
মুগ্ধতায় ভরে দিলো বহু পুরনো মনকে আমার!
এমন আর মিলেনাই আগে, মিলবেনা কোনোদিন আর, জানি।

জানি, গভীর তোমার চোখ ভরবেনা আর।

আমাদের একেক কথার ভিড়ে পড়ে রবে কতকাল
একেক নিঃশ্বাসের নিরব শাসনে
আসবে শীতের বিকেল।
যে মাঠের বুকে আজ বাড়েনাই ঘাস
আসবে, বেড়াবে সুনিশ্চিত।
নিমেষে কুড়িয়ে পাওয়া সোনালি সময়
আমাদের রঙ'এ প্রাণ ফিরে পায়
আমাদের মত আরো কোনো মানুষের মনে মনে
সাহসে, সৌন্দর্য্যে বুনে দেয় মুক্তির সাধ।

জানি, গভীর তোমার চোখ ভরবেনা আর।
জানি, গভীর আমার মন ভরবেনা কোনদিন আর,
তোমার পরেতে।





মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১১

তুমি আমাকে এগিয়ে নিলে পথ থেকে পথের ধাপে
হেঁটে যাওয়া আলোর শরীর, অন্ধকার থেকে আগলে।
এগিয়ে যাচ্ছি আমি ... যেন আরো একটু পথের পরেই
পেছনে তাকিয়ে দেখবো, হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছো!
কতদূর দেশে দেশে চলেছি আমি, আর তুমি দাঁড়ানো
সময়ের ঘূর্ণন থামিয়ে, নিজেকে থামিয়ে
আমাকে দেখছ শুধু, দেখছ ... আমি এ পথে, ও পথে
ক্লান্ত শরীরে, কখনো উচ্ছাসে আমার চোখ বেয়ে
পড়ে গেলো হঠাৎ এক ফোঁটা নোনতা আবেগ।
তুমি দেখছ, আমি মুছে ফেলছি আড়াল করে,
সামলে নিচ্ছি একা প্রচন্ড বাতাসে উড়ে যাওয়া চুল।
আমি আকাশ দেখে, মনের চোখে তোমার একা দাঁড়িয়ে থাকা ভেবে
হোঁচট খাচ্ছি, তুমি দেখছ ... এইমাত্র ঠোঁট কেটে তাজা রক্ত বেরুলো
মুছে নিতে তুমি, আমি ভাবছি। ভাবছি আমি তোমার একা দাঁড়িয়ে থাকা;
আর কিছু দেখা হচ্ছেনা আমার!
কানে ভেসে আসছে, অস্ফুট অথচ কখনো না ভুলে যাওয়া শব্দমালা
"তোমাকে কি অদ্ভূত সুন্দর লাগছে এখন, আজ!"

শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১১

বেশ ক'বার এলাম এই প্রান্তরে, হয়ত কিছুর আশায়।
কিছুই মিলছে না। উদ্ভ্রান্ত, অসহায় হয়ে বার বার
কার কাছে যাব? কোথায় যাব?
একসময় মনে পড়ে, নিজের একটা একা ঘরের শখ ছিল খুব!
এখন সেই ঘর মিলেছে, অথচ মিলছে না যেন কিছু আর!

রাত গাঢ় হলে পরে, সুনসান নিরব চাঁদ এসে আছড়ে পড়বে জানালা'র ফাঁক গলে
কিংবা পাশের বাড়ীর জানালা ফুঁড়ে বৈদ্যুতিক আলো
পর্দার এপাশে একেবারে একা আমি, পাশে কোন বই পড়ে রবে!
আর মেঝেদের বাড়াবাড়ি জেগে ওঠার প্রহরে আমার এপাশ, ওপাশ।
সেই ভৌতিক আলো আর আঁধারে আয়নায় ছায়াকেও মনে হয় অন্য কোন কেউ!
নিশ্বাস অসাড় করে চুপ হয়ে পড়ে থাকি, তাকাই না কোনোদিকে
এই করে কাটে নির্ঘুম বেপরোয়া রাত।

দিনের আলোয় তীব্র কটাক্ষ গায়ে মাখার প্রস্তুতি নিয়ে মেঝে বেয়ে
চলে আসি অন্য আমিতে। সারাদিন সভ্যতার পারদ গিলে খাই। গলা জ্বলে যায়।
ভেতরের আমিটাকে লুকাতে লুকাতে রাত থেকে, দিন থেকে, সভ্যতা থেকে
ক্লান্ত আমি ... কোথায় যাব? কার কাছে যাব?


শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১১

মেঘের মত দিনের রঙ পড়েছে
ঘরে ঝড়ের তান্ডবের ঠিক আগে
আনন্দ নিয়ে আসা অন্ধকার।
অগ্রহায়ণের কাল ...
ঝড়ের দিনের কথা নিয়ে এল মনে!
ফিঙ্গেদের আশ্রয় খুঁজে নেওয়া
পাখার পালকে পড়েছিল চোখ।
মেয়েটি একা, তার বসে থাকা নিয়ে
রাতের কালো আর ভোরের কুসুম আলো
শরীরে মাখিয়ে, সয়ে নিল গুমোট দুপুর।
বিকেলের মাঝে সে এসেছিল দুই রাত পরে
বেহিসেবী পা'য়ের পাতায় তখন
আন্দোলিত অলস নির্লিপ্ততা।
মিলেছিল মন, এমন সময়ে অসময়ে
মিলে গেছে ঝড়ের দিনের সাথে
মনেদের মিলে যাওয়া অপেক্ষার ক্ষণ।
তেমন দিনের কাছে গচ্ছিত আছে ঠিক
গোপন প্রণয়।
ছেলে আর মেয়েগুলো আলাদা বসতি গড়ে
কালের মতন।







প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে আমি অফিসে যেতাম
ঢাকা'র বিখ্যাত জ্যাম আর গ্রীষ্মের ভ্যাপসা দুপুরে
এ শহরের সবথেকে যাচিত রাস্তা পারিয়ে- সংসদ ভবনের
কতকিছু যে দেখার আছে দূর থেকে তার
তখনো ইচ্ছেটা মরেনি, তাকে ভেতর থেকে দেখার।
বাইরে থেকে যতটা দেখা যায়,
তাতে সবচাইতে আকর্ষ্ণীয় মনে হয়
আদরে ছেঁটে রাখা ঘাসগুলো।
তার ওপাশে যা হয়, তা আমার জানা নাই।
সম্ভবত ঘাসগুলো'র যেমন নেই অযাচিত বাড়ার অধিকার
আমাদের মত কিছু মানুষেরো এর থেকে বেশি জানা অযাচিত!
সে যা হোক, আমার সেই ঘাসের উপর পা ফেলে হাঁটতে ইচ্ছে করে খুব
আর এই ইচ্ছেটা মরেনি এখনো!
এই বিজয় এখনো অর্জিত হয়নি আমার!

...সংরক্ষিত এলাকা'র পরে যে ফুটপাথ
সেখানে এক জীবনের কথা বলি।
সে এক শিশু, অপার্থিব মায়াময় চোখ নিয়ে তার
থেমে থাকা জ্যামের ভিড়ে বসে থাকা আমার কাছে ছুটে আসতো।
আমি ক্ষিদে না পেলেও ছোট সেই শিশুটিকে
আরো একটু দেখব বলে
ওর ঝুলি থেকে কিনে নিতাম, ভাজা পপকর্ণ।
এভাবে রোজ  নাম না জানা শিশুটিকে দেখতাম আমি।
আর অসম্ভব উজ্জ্বল শিশুটি মলিন হতে শুরু করল
প্রতিদিন আমার যাওয়া আসার মাঝে।
থেমে থাকা জ্যামের ভিড়ের জৌলুস বাড়াচ্ছে নতুন গাড়ির সংখ্যা
সেইসাথে শিশুটিও বাড়ছে সংসার আর ঝুলির বোঝা কাঁধে নিয়ে
তার ক্রমাগত মলিন হতে যাওয়া চামড়া'র ভাঁজে
চাপা পড়ে গেছে থেমে যাওয়া শৈশব।
ওর চোখের সামনে এনে দিতে ইচ্ছে করে আজো
হাজারো প্রজাপতির গা'য়ে মাখা রঙ
ওকে মুক্ত দেখতে ইচ্ছে করে
এই বিজয় এখনো অর্জিত হয়নি আমার!






বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১১

দেখেছ আকাশ নীল, দেখেছ নীলের বিশ্বস্ততা
দেখেছ হঠাৎ কুড়িয়ে পাওয়া মানুষের পায়ের ভিড়ে
কোন এক জোনাকীর মৃদু প্রজ্জ্বলন
দেখার, বাঁচার আকুলতা কি অসীম তোমার!
যখনই ঠেকছ কোন মোড়ে যেতে ঘুরে
তখন করছ মনে ...
অস্তিত্বের গহ্বরে মিশে থাকা আমাকে।
তোমার কাছে এভাবে সত্য হয়ে যায়
আগের অধ্যায়ের আমার উপস্থিতি
প্রতি অধ্যায়ে এভাবে আমি মিশে আছি।

নীল দেখা হয়না আমার
কুড়িয়ে তুলিনা জোনাকীর আলো চোখ ভরাতে।
বেঁচে আছি, জীবনের সম্মান ফেরাতে
ঠেকছি না তাই ...
না ঠকানো কষ্টের সাথে তুমি আছ মিশে
সত্যে মিথ্যায় জড়িয়ে থাকো অসাধারণ
আমার এক আকাশে বিরামহীন গতি তোমার
আসতে হয়না তাই আলাদা করে।

বোধে নিরন্তর যাত্রা একইসাথে
এইতো অবলম্বন আমার
তুমি এখনো পাওনি তার সন্ধান।
আমাদের দু'জনের মাঝে কে কাকে বেশি ভালবাসে?




চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি, চেষ্টা করে চলেছি
ক্ষয়ে যাচ্ছি, ক্ষয়ে যাচ্ছি, ক্ষয়েই যাচ্ছি শুধু
স্বপ্ন যা বাঁচিয়ে রাখছে, সে আছে আড়ালে, গহীনে
সত্য যা কিছু, মানুষের তৈরি সেটা, কখনো কবিরও
তোমার সত্য, আমার সত্য কিংবা আমাদের সত্য
তোমার মিথ্যে, আমার মিথ্যে কিংবা আমাদের মিথ্যে
সবকিছু মূলত জীবনের সাথে সাথে আছে
জীবন কখনো মাঝরাতে দেখে চলা রাস্তায়
জীবন অধর্মে, ধর্মে, জীবন কর্মে বাঁচায়
সত্য কিংবা যা হয় মিথ্যে সে জীবনের সাথেই তো আছে
এক জীবন শেষ, তো শেষ হয় সত্য, মিথ্যে, ক্ষয়
কর্মের শেষ হয় জীবনের শেষের সাথে
চেষ্টার বিশ্রাম শুরু হয় ... জীবন খুব দীর্ঘ তো নয়।

সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১১

আজ বড় ইচ্ছে করছে জল দিয়ে ধুই দ্বিধা,
জলগুলোকে মুছে ফেলে লাল সড়কের রাস্তা ধরে
হেঁটে হেঁটে চলে যেতে দীঘির জলের কাছে
সেই পুরনো আমার হাসি, সেই পুরনো দিনের বেলা
এক সে বসা সবুজ শাড়ি, তোমার শরীর নীলে ঢাকা।

মনে তোমার পড়ছে নাকি, বলো ... !
রোজ রোজ সেই ইঁট-সুড়কি'র পথ পেরিয়ে
আসতে আমায় নিতে
তোমায় দেখে এক নিমেষে হারিয়ে যাওয়া আমি
কেমন মিলিয়ে যেতাম শ্যামলা ত্বকের মায়ায়!
কোত্থেকে যে আসতো অমন দিক হারানো হাসি!
ভুলে যেতাম, তুমিও দিতে ফাঁকি।

এমন করেই কাটতো আমার বেলা
তোমার চোখে, তোমার দেয়া শোকে
তোমার আমায় ভাসিয়ে নেওয়া হাজার অনুরাগে।
তোমার লেখা কথার মায়া, রোদ পোড়ানো হাসি
তুমি তো ঠিক জানতে, আমি তোমায় ভালবাসি!

মনে তোমার পড়ে সেই গুমোট দুপুরবেলা
চোখের তারায় লেপ্টে দিলে যত নিরবতা?
বললে, তুমি থাকবে আমার পাশে
দিন কাটাতাম সেই ভরসার আশে ...

তারপরে সেই এল কালো মেঘ
কালো তোমার প্রিয় বলেই
জড়িয়ে নিলে তাকে?
আমি পুড়ে কালো হলাম কালো'র দেয়া শাপে!
তুমি আমি পেছন ফেলে যত শত ছন্দ
মরছি এখন জীবন খুঁজে, বিষাদে উদ্ভ্রান্ত!

আমাদের সেই দিন,
আমাদের সেই ভুলে ভুলে মিলে যাওয়া
এক জীবনের সাধ, মিটবে কি আর অন্যে?
জীবন করে মৌন মিছিল, হন্যে।

দ্বিধা এখন একঘরে সুখ, সেই পুরনো বাস
তোমার দেয়া নতুন জীবন, করে হাঁসফাঁস.
তুমি কিছুই মানবে না এর জানি
হয়ত জীবন তোমার কাছে
আমার একেক আসার থেকেও
বেশি আরো নতুন কিছু, আরো অনেক দামী।

তবু আমার ইচ্ছে করে আজ
জল দিয়ে ধুই দ্বিধা।
তোমার এখন সবাই আছে,
আমি আজো একা ... ।


রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১১

অন্ধকার নামে অতল এক পাখির ডানায় ভর করে
চলছি করুণ নগরীর নামে অনামে ঠেঁসে চলা রাস্তায়
প্রতিমুহূর্তে পেরিয়ে যাচ্ছি সময়ের গতি
হিম অসাড় হাতে মুঠোভরে ধরেছি তাকে
সে উড়ে চলেছে ... মাটিতে হোঁচট খাচ্ছে-
আমার অনভ্যস্ত পা, কখনো টালমাটাল হাতের আঙ্গুল্গুলো।
অন্ধকার পাখির পেছনে আঁধার
তার সামনে, ডানে-বামে আঁধার
উপরে নিচেতে আঁধার আর আমি-
উলটে যাচ্ছি, সামলে নিচ্ছি, গিলে ফেলছি দ্বিধা, উল্লাস, ভয়।
অন্ধকার পাখিতে, আঁধারে মিশে আছি
বিষাদে ধুয়ে নিংড়ে নেওয়া বিশুদ্ধ নির্লিপ্ততা মেখে।

 

শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১১

রাতের মায়ায় ভুলে গেছিলাম
সকালে ঠিক ভুলে যাই
ভাবনা'রা এসেছিল ...
এখন ফকফকে সাদা দুপুরে
শত চেষ্টায় বুঁদ হয়ে থেকে
ভাবছি তাদের
ভাবনা'রা এসেছিল, জানি
শুধু ওটুকুই অবলম্বন
আর তারা আসছেনা ফিরে
করি কি এখন!

কাঙ্গালের মত বসে আছি
হাঁটছি আহত পায়ে
উন্মাদ, ভ্রমণে শব্দের দেশ
ওরা আর আসবেনা ফিরে
এই ভাবনায় নিঃশেষ।
একবিন্দু সময় নিয়ে
হুট করে যে আসো তুমি
যখন আসো ... তখন আমার
চোখ পড়ে যায় ঘুমে
তুমি জানো ... তবু
অমন করেই আসো!
এই আসাটা সারাবেলায়
এখন তখন যখন ঘটে
তখন আমার চোখ পড়ে যায় ঘুমে!


কে যেন আসে রোজ
নিয়মে না অনিয়ম মেনে,
কে তা জানে!
জানতে ইচ্ছে করে খুব ...

টুকরো টুকরো অবসরে
জড়ায় না বিগত কোন শোকে
আসে আর যায় নিরবে
কে যে রোজ আসে!
কে তা জানে?

ঘুমোতে যায় যে বিছানা,
ঘুম থেকে ওঠে প্রতি ভোরে
কথারা হারিয়ে যায়
কথারা এসে যায় গোপনে

এসে রোজ পড়ে থাকে কথা
গোপনে সে এসে জানে সব
জানিনা সে আসে রোজ গোপনে
... জানতে ইচ্ছে করে খুব
কে তা জানে?

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১১

কাল সেই আশ্চর্য্য সন্ধ্যাকাশের
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কোন ভাবনায়
নিরিবিলি বিলি কেটে দিচ্ছিল নিশ্চিদ্র কাল?
হাতের পাশেই পড়ে থাকা শুণ্যতা
গভীর, নিরব মনের সয়ে যাওয়া দিনলিপি
চুপচাপ শিশিরের বয়ে যাওয়া
আর আবেগে ফেঁপে ওঠা দেহের বিশালতায়
বহু জীবন পোড়া ছাই মুঠোবন্দী করে
একই এই আকাশের সামনে দাঁড়িয়েও
কেমন অসহায় বোধ হল!
এক এক করে কোটি তারা
স্থির চোখে দিয়ে যায় দেখা
আর যেভাবে জ্বলে ওঠে যেন
খন্ডে খন্ডে ভাগ করে দেয় বোধ,
অবোধ সুখী মানুষের অনতিক্রম্য মগজের
ভেতর থেকে মিটিমিটি ...
এক এক করে হাসতে থাকে সব
অট্টহাসি ছড়িয়ে পড়ে
আকাশের নিচে, মাটি ফুঁড়ে বেড়ে ওঠা
ঘাসের বুকেতে পড়ে আছড়ায়।
অবশেষে সেই ক্লেদ, ক্লান্তি
পাশাপাশি আকাশের ছায়া পেছনে রেখে
ক্রমশ হারিয়ে ফেলা জীবনের ভারে ন্যুব্জ
একা ...




রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১১

মেঘহীন আকাশে যেমন শুধু নীল
ঘোর লাগানো শূণ্যতার নীল
মাছরাঙ্গা পাখি'র পালক থেকে
ধার করে নিয়ে যাওয়া নীল
আর গমগমে দিন-দুপুর
শ্যাওলা সবুজে টুপ করে খসে পড়া
নীলের ভূমিতে ভাসে সে প্রথম নীল
আমার শেষ নীল ...

মৃদু বাতাসে উড়ে যায় নীল
নীল বসে থাকে ঘাসের পাশে
মেহগণি গাছের সারি'র ফাঁক গলে
চুয়ে পড়ে নীল।
মেঘের রাত থেকে চুরি করে নিয়ে আসে
নীলরঙ জ্যোৎস্নায়
একাকী আবেগে বেড়ে ওঠা বৃষ্টি নীল।

নীল আমাকে বুঁদ রাখে নেশায়
নীল আমাকে একা করে রাখে
নীল আমাকে ভুলতে দেয়না নীল
নীল আমার পাশে পাশে থাকে
নীল আমাকে ছেড়ে দূরে যায়
নীল পড়ে থাকে আমার জানালা'র পাশে
নীল আমায় দেখেও দেখেনা
নীল, চোখে আমাকেই শুধু দেখে
নীল উন্মত্ত করে তোলে
নীল শান্ত করে দেয়
নীল আমাকে হারিয়ে ফেলে
নীল আমায় আমৃত্যু নীল করে রাখে ...


শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১১

দুঃখ প্রকাশের ভাষা নাই জানা
যখন তুমি আর আমি এক বিন্দুতে এসে থামি
অথচ জীবনের বাঁক গেছে ঘুরে
আমরা প্রতিনিয়ত বসে থাকি মুখোমুখি দু'জনের
করি বিষপান যাপিত সময়ের
একদিনের ধৈর্য্যহীন সময়ের ফেরে
বাঁধা পড়ে গেছে প্রেমের প্রকাশ!
এ কেমন সংসার, এ কেমন পৃথিবী?
ভুল গুলো ঠিকঠাক পেয়ে যায় স্থান
ভেতরে কুঁকড়ে মরে দুইটা জীবন।

এইসব সামাজিক বাস্তবতা অবাস্তব মনে হয়
এইসব ভুলে ভরা দেয়ালের কাঁধ টপকে
চলে যেতে ইচ্ছে করে দূরে আরো দূরে
দেয়ালের আরোপিত বাঁধনের বাইরে নিতে ইচ্ছে করে সুখ
তোমার হাতের শৃংখলিত তরঙ্গে।
তোমার চোখে ডুবে যেয়ে ভুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে
বিষাক্ত বিষাদ।

কেন সময় দেয় না সময়,
কেন সময় দেয় না মুক্তি,
কেন সময় করে না ক্ষমা?
কেন বেঁচে থাকা হয়ে যায় মৃত্যুর মত!




বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১১

এক দিনের ব্যবধানে ছুঁয়ে দিলে আকাশ তোমরা
তোমরাই তো পারো তবে ফেরাতে পতনোন্মুখ মানুষের মন
কেন তবে ঝরে পড়ে রাতের বাতাস নিঃসহ যন্ত্রণায় কাতড়ে!
এক তুড়িতে শুকিয়ে ফেলতে পারো নোনতা জল, গুমোট তান্ডব
কেন তবে ফেরাও না হারিয়ে যাওয়া পাখি'র পালক শরীরে?

ওই যে দূরে ছিটিয়ে থাকা শব্দমালা কাঁদে, ডাকে
নিশ্চল মন অনড়, অবশ তাই হেলায় বেড়ে ওঠা শরীর আর ত্বক
মৃত চোখ স্থির অবিচল আড্ডায়
হাত বাড়ানো অস্থিরতায় শান্তি খোঁজেনা।
গোঙ্গানো অতীতে আড়মোড়া ভাঙ্গে পংক্তিহীন তেলাপোকা'র মত!

তোমরা পারো, আদরে গ্রহণ করতে নিষিদ্ধ জঞ্জাল
বর্তমানে  খুঁড়তে পারো ব্যস্ততা'র কবর
কেন তবে আরো একটু বেড়ে ওঠোনা? আরো একটু হাত বাড়াও
ফিরবে পতন, ফিরবে মানুষ, এক থেকে হবে সহস্রাধিক।
মানুষ ফেরাও ... আকাশ বানাও আকাশে। 



বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১১

যে বৃষ্টি শীত নিয়ে এল
আমি তাকে ছুঁয়ে বলছি
কোন অন্তরঙ্গ ঢেউয়েরও সাধ্য নেই
টলায় এই অসমাপ্ত প্রতিঞ্যা আমার।
আর যদি না আসো তুমি এখন ...
তবে এই যে বন্ধ হল অন্ধ চোখ
খুলবেনা আর তারা শত ছলনায়।
দুর্বিনীত সন্ধ্যাকাশে একটি তারা'র রাতে
ফুটিয়ে নিলে হাজার তারা, রুপা'র জোনাকী
কোন পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলে
উষ্ণতা আর ওমের রুপে অগ্রহায়ণে-
বৃষ্টি হয়ে এলে!
এক বর্ষায় ভাঙ্গেনি যে ঢেউ মাতাল
অন্ধকারে চেপে প্রলয় নিয়ে এলে
ক্ষেত মাড়িয়ে, বন পেরিয়ে, অসীম ক্ষমতায়!
এনে দিলে ঠান্ডা হাওয়ার প্রলেপ লেপা রাঙ্গানো আদর।

মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১১

জীবন আর চলমান মানুষেরা
যা বলে যায়, সব তার মিছে!
কোথায় রাখবে যক্ষের ধন
তোমার থেমে থাকা জীবনের
গোপন সরলতা?

যদি একেই বলে ভাল থাকা
তবে আমি ভালই আছি বেশ!
গুছিয়ে রাখছি ঘর, আসবাব
বেরিয়ে পড়ছি রোজ কাজে
আমার শারীরিক দেয়ালের কোথাও
এমনকি আঙ্গুলের কোন কোণে
জমে নেই কেটে যাওয়া রক্তের দাগ।
আমি সত্যিই ভাল আছি বেশ!

যদি জানতে চাও তারো গভীরে
তবে আমি তাড়িয়ে দেব তোমাকে
তোমাকে দূরে সরাতে,
তোমাকে ভোলাতে আমি ভাল আছি কিনা
জানা আছে সব কৌশল
তাতেও যদি না থামো তুমি
চোখ ফেরাবো পলকে।
কারণ, আমি ভাল আছি বেশ!

শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১১


চোখ পোড়ানো সুন্দরে চোখ পড়ার আগে ফেরাতে পারিনি চোখ
যদি জানতাম, তারপর এভাবে পুড়বে মন;
তবে চোখকে সাবধান করে ফিরে যেতাম!
ফিরে এসো। কোথায় গিয়েছো চলে?
আমি আসিনা তোমার কাছে, দেখিনা তোমাকে
তবু তো রয়েছে বাকি আরো ঢের ...
কোথায় গিয়েছো চলে?
আমার একা রাতের গল্প বলি আমি কাকে?
কে শোনে চাপা দীর্ঘশ্বাসের পতন,
শিশিরের শব্দের মত!
ফিরে এসো, তোমাকে দেখিনা, আসিনা তোমার কাছে
তবু রয়েছে বাকি আরো ঢের।
নিরবতায় লুকিয়ে থাকা আমাকে
পড়তে  তুমি এসো
একা এই পৃথিবীতে তোমার আর কিছু নয়
উপস্থিতি বড় প্রয়োজন ...
তুমি আছ সেকথা জেনে কাটবে জীবন বেশ
... ফিরে এসো।


[জীবনের বাঁকগুলো এত অদ্ভূত ঠেকে! কোথায় যেন কার সাথে মিলে যায় সব হারানোর পরে, এমনকি সময় হারিয়ে! ... পৃথিবী তো চলে ঠিকঠাক, জীবনের গতিও ... শুধু সময় হারিয়ে মিলে যাওয়া পথেরা মিলেনা কখনো। তেমনি কোন জীবনকে ভেবে  ...]
তোমার বাদামি তারা'র চোখে চোখ পড়তেই
চমকে উঠেছিলাম আমি ...
সূর্য্য থেকে উৎসারিত আলোয় বিষাদে-
সুন্দর, মায়াময় যত্নে, পবিত্র প্রেমে ভরা চোখ
আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল কিছু আগে ঘর ভরে
ফেলে আসা কষ্টের কথা!
পুরো এক বিকেল জুড়ে তোমার
বাদামি তারা'র চোখ আমায় ফেরাতে দেয়নি চোখ!

সেই ক্ষণের অপেক্ষা করতে হয়না
গ্রীবা উঁচিয়ে জানান দেয় প্রেতেরা
পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার
প্রাণপন যে চেষ্টা বর্তমানে বাঁচার
যত চেষ্টা ভুলে যাবার সব কালো ক্ষত
তারো আগে আগলে দাঁড়ায়
সংকোচে লুকিয়ে রাখা যন্ত্রণা
হাড় মাংস নিংড়ে, রক্তের অণুতে
বপণ করে বীজ প্রতিবার
জন্ম নেয় নতুন আরেক শোক ...
জানান দেয় তারা আছে বেঁচে!
বুক পোড়া আবেগের বাতাসে
কষ্ট ছাইয়ে খেই হারায় শূণ্যতাও।
পুরনো চাকায় পিষ্ট হয় সহজ প্রকাশ
অপ্রকাশিত কবিতায় ...

রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১১

ইচ্ছেগুলো ভুল দিয়ে ভরে দাও
ইচ্ছেরা বুঝবে তোমার ভুলগুলোকে
মনগুলোকে ...
যেমন বোঝে স্বপ্নেরা ...
ঘুম ভাঙ্গা চোখেও লেগে যায়
চোখের পাতায় ...

শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০১১

-তুমি এখন কোথায়?
-জানিনা!
-তোমার ঘরে কে?
-আমি ...
-এসো, আমরা কথা বলি, করি রাত পাড়।
-কথা?
-হ্ম ... কেমন আছো?
-ঘরকে প্রশ্ন কর ... এই ঘর জানে আমার সবটা
যেটুকু আমিও জানিনা!
-ঘর কি বলবে আমায় জানতে যা চাই?
-না, ঘর বলতে পারেনা, ওর বুকে কান পাতো
শোনো আর বুঝে নাও, শীতলতা, নিরবতা।
-কিন্তু আমি যে জানতে শুধু চাই, তুমি কেমন আছো?
কি তুমি ভাবছ, কেমন করে কাটছে তোমার বেলা!
-তোমাকে আমি কিচ্ছু বলব না ...
যে রাখেনা আমার একা ঘরের খোঁজ-
যে কিনা আমার জন্যে জেগে থাকে অহর্নিশি
তুমি যে বোঝনা তাকেই!


সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১১

আজ নিয়ে বহুদিন পেরিয়ে গেল
আমি ভুলেতেই বসেছি, গতকাল বা পরশু ঠিক কি ঘটেছিল!
এই বিষম দৈন্যতায় মনে পড়ছে না
সেই লোকেদের কথা, যারা প্রতিদিন মনে করে
আমার ঘরে ফেরা, ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া দেখে!
আমার বিরক্ত হওয়া চোখ যেমন করে
অপমানিত হওয়াটুকু সইয়ে আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়
সেই চোখগুলো বিরতিহীন ছিলো,
আমি আমাকেও দেখিনি, বহুদিন পেরুলো!

একটু কি মনে পড়ে যাচ্ছে, ভিড় ঠেলে চলে যাওয়া মেয়েটিকে
একমুখ রোদ নিয়ে নেমে গেল রাস্তায়, পেছনে রয়েছে পড়ে
আমাদের সলাজে লুকিয়ে রাখা সামাজিকতা
যেতে যেতে নামিয়ে দিয়েছিল মেঘ আকাশ, আলোগুলো থামিয়ে!
তারপর ... নতুন রেইল লাইন, হাত পেতে বসে থাকা করুণ তরুণ
ঠকে আর ঠেকে যে শিখে গেছে ঠকিয়ে দেবার খেলা।
নতুন ধানের গন্ধমাখা গা মাড়িয়ে শিশুগুলো সব
খালি পা'য়ে, এঁটো হাতে ... আদরের শুষ্কতায় নিরাকার হয়ে যাচ্ছে
তাদের হারানোর অপেক্ষায় আমরা মন হারিয়ে
দৌড়ে চলেছি দিগবিদিক।
কতগুলো চোখ হল মোট, আমি তাওদেখিনি, বহুদিন পেরুলো।

খুব করে যেটুকু আসছে ঘুমহীন দেয়ালের পিঠে চেপে
লাল, শুধু লাল ... চোখ লাল, চুল লাল, নখ লাল
ইঁদুরের আশীর্বাদে লালিত দাঁতের ভাঁজ
সুরভিত পোশাক গলে তেঁতিয়ে বেরিয়ে আসা ভুড়ি
আর এসবের ভেতরে কুৎসিত পৃথিবী আরেক।
ভাব্লেশহীন আলিঙ্গন, ইচ্ছে ভাঙ্গন ...




ভালবাসা এমনি সরল যে তাকে ইচ্ছে করলেই বলে দেয়া যায়না
আমি তোমার জন্যে বিসর্জন দেব সবটা।
ভালবেসে বরং ফিরে যাওয়া যায়, দূর থেকে দূরে, আরো দূরে
ভালবাসায় তাই অবধারিত অবাধ্য জলের পতন
পদ্মপাতা'র বুক থেকে ...
ভাল না বেসে বেঁচে থাকা যায় বরং বেশ
ইচ্ছে'র অবাধ্যতা গিলে বলে দেয়া যায় অকপটে
ফিরবনা, রয়ে যাব, করব জীবন পাড়, জীবনের ছলে।
না ভালবেসে শতবার মৃত হওয়া যায়।




মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১১

যে জীবন কাটাচ্ছি আমি, সে তো আমার নয় ...
আমার তো কথা ছিলোনা এমন করে ছুটবো!
আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় কাঙ্গালের মত, যেন কি নেই
যেন কি শংকায়
ঘর আছে কিনা, নুন আছে কিনা
তারপর কেউ এলো কিনা, এমনকি
তারা এসে যাবার আগেই ঠিকঠাক হল কিনা অন্দরমহল!
ভালবাসা'র সন্দিগ্ধতায় আমার চোখ ভিজে যাবে
এমন কথা কখনোই ছিলোনা ...

আমার বরং সময়কে পেছনে ফেলে
ফুল নিয়ে, সুখ নিয়ে, সুর নিয়ে
পাতাদের ঝিরিঝিরি আন্দোলনে
আর চোখ থেকে চোখে
জেগে ওঠা তরঙ্গে ভর করে, নিঃশ্বাসে স্বাধীনতা'র
প্রচন্ডতা নিয়ে শুধু এমনি করে, অম্নি করে, যেমন করে
তেমন করে, হেসে হেসে, কেঁদে কেঁদে, নিশ্চুপ ভেবে, কথার আবেগে
জেগে ওঠার প্রতিশ্রুতি ছিলো জীবনের কাছে!

অথচ কেবল রাত আর ভোর হওয়া ছাড়া কোন আন্দোলন নেই
নেই কোন তীব্রতা বেঁচে থাকার ...
যেন এমনি হবার কথা ছিলো, যেন এমনটাই হয়, তাই
এভাবেই চলে যাব এপাড় বেয়ে ওপাড়ে!
তবে আর কি সাধ ছিল জীবনে?
আকাশের ম্রিয়মাণ আলোয় আমি দেখবনা কি আর খসে পড়া চোখের
ভিতর থেকে উদ্ভাসিত আলোয় আমার জন্যে আহ্বান!
আমি এই জীবনের কাছে শুধু কি এমনই চেয়েছি?
যে জীবন চলেছে আমার; সে তো আমার নয়!

সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১১

কি অপেক্ষা করে আছে আমার জন্যে!
নির্মম একাকীত্ব নাকি নিশ্চিত পরিণয়?
যদিও জানি পরিণয় কখনো নিশ্চিত নয়
এমনকি পরিণত পরিণয়েও একাকীত্ব
শকুনের চোখের মত চেয়ে রয়।
সেই কথা ভেবে অপেক্ষা না ফুরানোর
তাড়াটাই রয়।
এতোকাল এই চরাচরে বসতি ছিলোনা কোন
ধূ ধূ মাঠে হট্টগোল বাঁধায়নি কোন পাড়া-গাঁ
তাই বুঝি একা পথের শুরু থেকে শেষ জানা ছিলো।
হলুদ পাখি'র চোখে স্বপ্ন খোঁজেনি  কোন স্বপ্নবাজ
প্রান্ত আগলে দাঁড়িয়ে থাকা সেই তরুণীকে ভুলে।
তাই অকৃত্রিম ছিলো ধূসর বিকেল
ফেরিওয়ালা'র ব্যাগ থেকে বিচ্ছুরিত লাল-নীল রঙ এ
তাই হয়ে যেত দিনমান সবুজাভ উদ্যান।
এই প্রলয়ের কালে স্বপ্নেরা উড়ে যায়
পাখি থেকে পাখি'র পালকে ...
ফুলে ফুলে ঘুরে হয়না তো স্থির তার তোলপাড়
বসতি ফ্যাসাদে ডোবে পুরো ঘূর্ণ্ন
ধূ ধূ মাঠ হয়ে যায় ফসলের ক্ষেত আর-
পথ থেকে পথে হলুদ পাখি'র চোখে ঠাঁই নেয় স্বপ্নবাজ।
সবকিছু হেরে যায়, হারায়না তবু সেই তরুণীর মন,
জীবনের আগে আগে চলে যায় সে, মরণের সাথে বাজি হেরে।

রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১১

আমি দেখতে পারছি, লেখা আছে
"এখানে প্রবেশ নিষেধ।"
অথচ কি আশ্চর্য বোঝো
আমার আকাশ গলে এইমাত্র উড়ে গেল
আরো যে একটি সাদা কবুতর!
ও যখন সীমানা ফুঁড়ে ফিরে আসবে-
আমার জন্যে নির্ধারিত ঘাসে।
আমি ওর চোখ দেখে জেনে যাব,
এমনকি তোমার প্রান্তে হাহাকারে-
বেড়ে ওঠা ঘাসেরাও চায় আমার সান্নিধ্য!
কাঁটাতারে বেঁধে রেখেছ শিরা-উপশিরা,
মনে মনে হাসি ...
অনুভবের তীক্ষ্ণতা রুখবে কি করে?

শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১১

এই বিক্ষত নগরীতে আমি আর ফিরব না
আরেকটি মৃত রাতের
নিরব চলে যাওয়ায় শামিল হব আমি
অবহেলায় ক্রমাগত ক্ষিয়ষ্ণু  অন্ধকারে
ভালবাসা নিয়ে আর ফিরবনা কোনদিন
ভোরের নিছক মায়া'র ডাকে ফিরবনা আর

আমার কোন দিক নেই, তবে আমি উদ্ভ্রান্ত নই
আমি জেনে গেছি, ভালবাসা'র পিঠেও বসানো যায়
বোঝাপড়া নামের ধারালো ছুঁড়ি'র কামড়!
এইসব ভুল করে ভেসে আসা দিনে
এইসব মানুষেরা প্রেমহীন পড়ে রয়
আর পড়ে রয় দিব্যি এপাড়-ওপাড়
আত্মা মেলেনা ...

তাই, ফিরে গেলাম অভিমানে
এই সুখ নিয়ে, বিকিয়ে দেইনি শেষ শুভ্রতাটুকু।
আশ্চর্য মেঘদল! কালে কালে কত তুমি এলে
এখনো দিব্যি চলেছো ...
তোমাদের দেখে থেমে থেমে যাই!
তোমরা তা দেখোনা ...

পাতা'র আড়ালে ঘুম পড়ে রয়
কতকাল তোমাদের দেখে
তারা ঝরে যায়, গাছগুলো নুয়ে পড়ে গোপনে!
কাঁদা জলে গড়াগড়ি
তারপর গন্ধ ফুরায়!

তুমি তার সব চেখে বয়ে যাও শুধু ...
তোমাদের উঁচু উঁচু
ওড়াউড়ি দেখে ঘুমোতে যে পারিনা!
যেখানেই যাও ... তোমার পেছনে আরো
ভেসে রয় কত শত রঙ!

আমার এদিকে ঘর বসেনা মনেতে
অপলক চেয়ে থাকি, দেখে যাই শুধু
আর বৃষ্টি গড়ায়!
তোমরা তা দেখোনা ...



সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১১

তোমাকে ওভাবে চলে যেতে দেখে দেখে
মনে হয়, আর কোন চলে যাওয়া দেখে
ব্যাকুল হবেনা নিঃশব্দ সময়!
কেন, ওভাবেই বারবার চলে যাও তুমি?
কেন, এভাবেই বারবার ফিরে ফিরে আসো?
যাবে, যেতে হবে ... আমাকেও যেতে হয়
কেন তবু ফিরে ঘুরে এসো?
...যাও

বেশ রাত অব্দি জেগে ছিলে তুমি কালও
আজ রাতেও কি জেগে আছ অমন করেই?
মরা গাং'এ ঢেউ তোলা যায়
আজও তা ভাবছ নাকি?
শোনো, ঘুণপোকাদের দখলে যাবার আগেই
তোমায় বলে রাখি
পুড়িয়ে ফেলো, যত পারো ...
আটপৌড়ে স্মৃতি।

অবসাদে ভ'রে আছে আমার আত্মা

তবু না বলা কথা'র ভিড়ে মনে হল
এই কথাটা জানিয়ে তোমায় রাখি!
ঘুণপোকাদের দখলে যাবার আগে
পুড়িয়ে ফেলো
মন পোড়ানো স্মৃতি ...

শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১১

যদি ডাকে তবে যাব
ভুলে গিয়ে যতসব পীড়া সে দিয়েছে আমায়
সব কথা অব্যক্ত রেখে
বেড়াব উল্লাসে।
হঠাৎ পালটে দেব
অভিজাত কষ্টের যাওয়া-আসা
যদি অন্তর কাঁপে, আমি যাব!

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১১

একে একে সব খসে পড়ে।
পুরনো অভ্যস্ততায় এইসব খসে পড়া দেখে
এখন আর বিস্ময় নেই, নেই দূর্বিষহ যন্ত্রণা।
মনের সঙ্গে দেখা করা হয়ে ওঠেনা ইদানীং।
আশা করছি, সে ভালো আছে, কিংবা
মন্দতায় সামলে নেবার ক্ষমতা তার হয়েছে এখন।
সুতরাং, ধ্বংসের মুহূর্তে বেঁচে থেকে
ভুলে যেতে বসেছি, মরেছি কবে।

বেশ অসাধারণভাবে আছি বেঁচে
জলের তোড়ে ঘুরছিল যে জবা
যাকে দেখে অনেকবারের মত আরো একবার
পেয়েছিলাম প্রেরণা ঘুরে দাঁড়াবার, জেনেও
সে জবা পেরে উঠবেনা শক্তিতে।
তবু, তার উদ্যম দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম
কাতর হয়েছিলাম, তখন আমার চোখ ভিজে যেত!
কি বেসামাল সুন্দরতায় ভুলে যেতাম
কুৎসিত অবাস্তব বাস্তবতাগুলো!
এখন এই অভ্যস্ত চোখ জ্বলে যায়;
তবু জল আসেনা।

হন্যে হয়ে খুঁজি মাঝে মাঝে সেই ঘাসফড়িং
কোন এক মধ্যাহ্ণে তাকে এনেছিলাম।
কত আদর করে বাঁধতে চাইলাম, সে তবু
জুড়লোনা তাকে।
সে তার মত করে মৃত্যু আলিঙ্গন করে
আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল,
অভাবে ওভাবে বাঁচতে হয়!
আমার চোখ ভিজেছিল,
কি আশ্চর্‌্য্য, এই চোখ এখন আর ভেজেনা!

এখন আমি শিশিরের শব্দে জেগে উঠেও-
ঘুমিয়ে পড়তে জানি।
আলো'র পরোয়া করিনা।
অন্ধকারে চমকে উঠিনা, ঠাঁয় থাকি দাঁড়িয়ে
শিহরিত হয়ে দেখি, নক্ষত্রের পতন!
এখন আমার চোখ ভেজেনা ...
আমি কি নির্মমভাবে বেঁচে আছি সব খসে পড়া দেখে
এই সয়ে যাওয়া অভ্যস্ত চোখ নিয়ে।

তবু কখনো খুব ইচ্ছে করে ঘাস বিছিয়ে শুই
আকাশ দেখি, দেখি একা পাখিদের ভিড়
তবু আরো একবার আর বহুবার
অনভ্যস্ত হবার অজুহাত খুঁজি।
দেখি, জোনাকী উৎসব ...
আর একবার স্পর্শে কেঁপে উঠি
আরো বহুবার বিশ্বাস করি ভালবাসায়
আমি বিস্ময়ে ডুবে থাকার
সেই উন্মত্ত সময় এ সময়ে চাই। 
কিন্তু আমার চোখ ভেজেনা
আমি এমন অপারগ হয়ে বেঁচে আছি।





মধ্যরাতের পরিত্যাক্ত নির্জন রাতের আকাশে
শুকতারা আর চাঁদের অভিসার দেখে দেখে
মেতে উঠলাম এক জীবনের পথে
ভুলে, এখানেও আছে এক জীবন পড়ে।
পরিণয়ে নয়,
তারা আর চাঁদের দূরত্ব দেখে যেখানে ভোর হয়!
এই গূঢ় সত্যে বেঁচে থেকে থেকে
ক্লান্ত পা'য়ে শুরু করি যাত্রা আবার।
ভুলে, বনহরিণীর বুকের কোমলতা নিয়ে
এখানে বেঁচে থাকা দায়!
কাটে বেঘোরে লেগে থাকা ঘোর
অতিক্রান্ত পথে ফিরে যেতে
লাগে আরো কিছুটা সময় ...

যে পথে ফেরেনি কেউ
সেই পথ খুঁজে, বৃষ্টিতে ভিজে পাই
নতুন বাতাস!
সকরুণ, নিদারুণ প্রণয়বিলাস।



বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১১

তারপর হেমন্তের শেষ রাতের অপেক্ষায় রইলাম
একটি শিশুও যে রাতে থাকলোনা দাঁড়িয়ে ফুটপাথে
আধো ঘুম, আধো খোলা চোখে
আমার ঘরে ফেরা দেখবেনা বলে আর
নিবিড় মমতায় আমি দেখে নিলাম শেষবার
ঘুমন্ত রাস্তা'র বুকেতে রয়েছে দিব্যি তোলা
ঘরে ফেরা প্রতিরাত আমার বা তার!

শিশিরের রং'এ তার চোখরঙ পড়েছিল ঢাকা
ইঙ্গিতে বুঝিনাই কোন মায়া ছিলো তার বুকের তল্লাটে
এতোবার এলাম গেলাম
একই সব অলি গলি পেরিয়ে
বুঝিনাই হেমন্তের রাতের মায়া পরে গেলে
শেষ হবেনা ফেরা আমার বা তার!

তারপর কত কত হেমন্ত পেরুল, কত রাত শেষ হল শুরুতে
সেই যে থামল শিশু
আর তারা ফেরেনাই,
আধো ঘুম, আধো খোলা চোখে
ঘরে ফেরা দেখেনাই আমার বা তার!
শেষ যেন হলোনা আমার ...

এই রাত আসবে তাই প্রতিরাতে ফিরি আজো ঘরে
সেই রঙ চোখে মেখে বসে থাকি রাত কোলাহলে
হেমন্তের রাত বুঝি এলোনা আবার!
হেমন্তের রাত আর এলোনা,আঁধার!



বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১১

ঘোর অমাবস্যার রাতে মাঠের উপরে
সারি সারি কাশের বনেতে সে এসেছিল
চলে গেছে সবটুকু প্রেম বুকে নিয়ে তার।
বিরান এই বিবর্ণ নগরীতে
সেই মাঠ, সেই অমাবস্যা নেই আর
দহনের কাল রয়ে গেছে।

এই বুকের মলাটে রয়েছে রক্ত, ক্ষত
ভেতরে ক্ষয়িষ্ণু নদী তার
বিন্দুসম দেহ নিয়ে চলে
নদী চলে আর বলে যায়
যা কিছু ফেলে আসা তার
রাত, মাঠ, প্রেম বুকে নিয়ে এসেছিল রাজার কুমার!
এসেছিল আকাশ পেছনে ফেলে
মুছে দিয়ে চন্দ্রটিকা, লালিত্য, বেশভূষা
একাকী সময় অবজ্ঞ্যাভরে ঠেলে
সে এসেছিল অমাবস্যার রাতে, কাশের বনেতে
সবটুকু প্রেম বুকে নিয়ে তার ...
ফিরে সে গেছে, সেই প্রেমিক কুমার।

এই নিঃসীম শূণ্য লোকালয়ে
সব নামের গহীনে
বেড়ে ওঠা কদমের ডালে
পাখিদের মৃদু কোলাহলে
সে যে ফিরবে না আর
একাকী চলে আসা রাজার কুমার!
একটি অসীম অপূর্ণ রাত পেরুলো
ভোর হল শেষ অন্ধকারটুকু সাক্ষী রেখে
যান্ত্রিক রাতের পর অবশেষে
এইসব অবসরে আমি অপেক্ষায়
একটি শব্দের ...

এত শব্দ এত ধ্বনি এল
পরম আকাংখার শব্দটুকু এখনো এলোনা।

সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১১

তোমার মত কেউ থাকবেনা দাঁড়িয়ে
ঘাসফুলের মত মায়াময় হাসি মেখে
কেউ বলবেনা, "চোখ মুছে ফেলো!"

গাছে গাছে ছেয়ে থাকা মেঠোপথে
ছুটে যাবে দুষ্ট বালকের দল
ইশারায় কেউ বলবেনা,
"ওদের দেখে রেখো।"

হঠাৎ পড়া দীর্ঘশ্বাস মুঠোভরে ধরে
কেউ বলবেনা, "ভয় নেই, তুমি হেঁটে যাও,
আমি তুলে দেবো
পা'য়ে পা'য়ে জড়িয়ে থাকা চোরকাঁটা
তোমাকে, আমি কাউকে ছুঁতে দেবোনা।"

তোমার মত কেউ দাঁড়িয়ে থাকবেনা
শত মানুষের ভিড়ে, চেনা অমানুষ হয়ে।

রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১১

আমি ফিরছিলাম আর ছিল ছাতিমের তলা।
ঠান্ডা কুয়াশা'র রাতে। তুমি ছিলেনা। তুমি পাশে ছিলেনা, তাই
ছাতিমের গন্ধ নেওয়া হলোনা আমার।
দেখলাম, কুয়াশা সরে সরে পথ করে দিলো।
ভীষণ ইচ্ছে হলেও
আমি গেলাম না দোকানের পাশে।
ধোঁয়া ওঠা চা'এর কাপেতে পোড়ালাম না ঠোঁট।

কি যে নিদারুণ সংকটে তোমাকে ফেলে এলাম
কি যে করুণা হল নিজের জন্যে!
আমার চোখের পাতা'রা ভিজছে
আর আমি দেখছি তোমার চোখ
তোমার ওই অসম্ভব একা চোখের নিঃসঙ্গতায়
আমি মিশে যাচ্ছি ... তবু
আমি ফিরে এলাম, নিজের জন্যে
করুণাগুলোকে লুকিয়ে ...

শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১১

যাবে? যাও তবে ...
যাবার আগে মনে রেখো
কখনো, কোনদিন যদি পেছনে তাকাও
এই বিকেলের ম্লান রোদের আদরে
আমাকে দেখবে ঠাঁয় আছি দাঁড়িয়ে।

তুমি মনে রেখো, ভুলেও ভুলোনা
আমাদের ছায়া এখানে রয়ে গেলো
দীঘির জলে আর ভেসে চলা নৌকো'র সারিতে
প্রেমাতুর মানুষের চোখে
যারা আমাদের ছায়ার আদলে পেয়েছিল
ভালবাসা শব্দটিকে।

সেইসব মনের পুঞ্জীভূত আবেগের কোলে
তুমি আমার পাশেই আছো
আমাকে তুমি কি করে মিটাবে?

যাবে? ... যাও তবে
শুধু মনে রেখো
তোমার নিঃশ্বাস লালন  করবে আমার দীর্ঘশ্বাস
আর আমি বিকেলের ম্লান রোদের আদরে
হেসে হেসে ভুলে যাব তোমার চলে যাওয়া!

শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১১

কল্পনায় কথোপকথনে ভুলেই গেছিলাম
আমি মর্ত্যলোকের মেয়ে
এখানে অবেলা ডোবেনা
মানুষের চিরচেনা বিশ্বাসে ওড়ে পাতারা
এখানে দিনের নিয়মে হয় দিন,
রাত পড়ে যায় রাতের নিয়মে
তবে শুধু দুপুর হলে
সবাই যখন নিয়ম করে ঘুমোতে যায়
আমি মর্ত্যলোকের মেয়ে আর একটু বাঁচব বলে
স্বপ্ননেশায় ডুবি ...
আর একটু ছুটতে যে চাই ...
আর একটু বাঁচতে যে চাই, বাঁচার নিয়মে!

তারপর দুপুর গড়ায়,
মানুষেরা দৌড়োয় নিয়মের পেছন পেছন
এরাও স্বপ্ন বোনে
এরা পৌঁছে যায় গন্তব্যে ...

শুধু আমি পারিনা
আমার বেঁচে থাকার নিয়ম আর
ডানা দু'টোকে আবার আড়াল করে দিয়ে
মানুষের নিয়মের ভিড়ে হারিয়ে যাই ...
এখানে অন্ধকারে বসে আছে একটি কাক
ওখানে পড়ছে বৃষ্টি
বৃষ্টি পড়ছে, ভিজে যাচ্ছে মাটি, বহু পুরনো;
পায়ে মাড়ানো ঘাস
বুভুক্ষু প্রেতের মত গাছের পাতাগুলো
মেটাচ্ছে তৃষ্ণা অবারিত।

ফোঁটাগুলো ফুরাবে একসময়
তার আগে সরাবে এইসব ধূলো
এইসব কাজগুলো করে দেবে আজ বৃষ্টি ...

তারপর কাকের চোখের কালো মায়ার মত
অন্ধকার; পাখায় করে নিয়ে যাবে
আলোর দেশে
যেখানে ভেজা ভেজা গন্ধ ভরে আছে
দেবদারু'র শান্ত কোমলতায় পথে নামবে
মানুষের কোলাহল।
আর উষ্ণতায় ধরা পড়বে হাত হাতের উপরে
সেইসব ঠান্ডা মায়াবী সুরগুলো দেখে
তোমরা ভুলে যেও
গত জীবনের কথা।


বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১১

রোদের গল্প আমি কার কাছে করব
রোদ যখন আমাকে এই প্রশ্ন করল
আমি বরাবরের মত হোঁচট খেলাম।

ছোটবেলায় দেখেছি এক প্রবীণা
প্রতি ভোরে উঠে তাকাতেন রোদের দিকে!
আশৈশব যেমন পারিনি-
শত চেষ্টায়ও রোদকে খোলা চোখে দেখতে
এমন ভরা যৌবনেও আমি তাই রয়ে গেলাম ...
কোন এক জীবনের কাছে শুনেছিলাম বহুকাল আগে
তার আকাশের সূর্য্য হলাম আমি
আমি তাকে আজও চিনিনি ...
কখনো জানতে চাইনি, সে কেমন আছে?

এতদিন পর আজ হঠাৎ যে কোন কাউকে
"ভালো আছি" বলে মনে হল
স্বভাবসুলভ "ভালো আছি" কথাটুকু সেও বলে কিনা!

কেমন কাটছে, জানতে চাইলে বলে ফেলি "ভালো"
অচেনা ছন্দে যে ভাবে
"ভালো আছি" বলাটা তারও কি স্বভাবসুলভ?
আমার তোমার সম্পর্কের সূত্র মেলাতে গিয়ে
ভুলেই যেন গেছি, বারান্দায় সেই রাত থেকে
একটা কালো বেড়াল আছে
ওর চোখের তীক্ষ্ণতায় যে ক্রোধ মিশে ছিলো
আমি তাই যতবার চোখ মিলিয়েছি
মনে হল ভেতরটা পুড়ে যাবে।
বেড়ালটার সাথে আপাতত আমার এটুকুই শেষ!

কাল রাতে যখন সে এলো,
আমার এই পুড়ে যাওয়া অনুভূতি ছিলো তখনো
কিন্তু অমন জোড়া চোখের শ্লেষ তাতে ছিলোনা।
তবে ও কেন অমন করে এলো কাল রাতে
বারান্দা বেয়ে, নুয়ে ... ঘুরে ঘুরে
সম্পর্কের  অমিলিত সূত্রের মত এও গেঁথে গেছে।

... এই তো কিছু সময় পেরুলো
আমি যেয়ে দেখে এলাম ওকে
মিলিয়ে চোখ ওর চোখে, ভয়ে ...
এবার সে বসে আছে, দাপুটে ঢং'এ
আরো একটু কাছে গেলেই, খামচে দিতো, কামড়ে দিতো
কেন শুধু বসেই আছে, জানিনা।
 বাড়ীতে আমি একা, আর সেই বসে থাকা বেড়াল
আর আছে ভয়, সেই দুই জোড়া চোখ।

... বেড়ালটা কিছু আগে চলে গেছে
জোড়া চোখ নিয়ে।
ওর সাথে আমার এটুকুতেই শেষ।

আমার তোমার অমীমাংসিত শেষটা রয়ে গেছে ...

মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১১

রাত এখন আনুমানিক বারোটা তিন
এটা ভাবতেই মনে হল, আমি তিন ভালবাসি।
তিন কেন ভালবাসি, সে বর্ণ্নায় যাবনা।
কারণ খুঁজে ভালবাসা, সে কি ঠিক?
ঘরে ফিরে দেখলাম, বিছানা জুড়ে আছে
বকুল ফুলের মত মাকড়সা'র দল।
কি করি এখন? ...
মাদুড় পেতে শোবো!
আমি যখন চোখ বুজে ভাবছি এত শত
খোলা চোখে দেখি, ওরা নেই আর!
কারণ খুঁজি ভালবাসার, সে কি ঠিক?

সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১১

উহ! কিচ্ছু দেখতে পারছিনা, হারিয়ে যাচ্ছি, মিলিয়ে যাচ্ছি
একটা কোন অবলম্বন পেতাম!
কিছুই তো মিলছেনা, আমি কি মরে যাচ্ছি?
অথবা যাচ্ছি কোন অজানায়!
কি যায় আসে! মৃত্যু, সে তো অজানায়ই যাত্রা!
হা হা হা, যেন জীবনের অধ্যায়গুলো কত জানা আছে!
নাহ! এখন আবার কেন এমন মনে হল
আমার একটা অবলম্বন দরকার
ছুটতে হবে ... পারছিনা, তাও পারছিনা আমি!
থেমে আছি, থেমে কি আছি?
আচ্ছা, এমনো তো হতে পারে, আমি স্বপ্ন দেখছি...
নাহ, এর নাম দুঃস্বপ্ন, শুনেছি।
তাহলে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি যে ছুটতে পারব না,
হারিয়ে যাব, মিলিয়ে যাব
তার কি নাম দেব? ...
ঝলমলে রোদ উঠেছে, দেবী এলেন বলে
আজ একটু পর সবাই বেরুবে
আমি যাবনা; আমি কোত্থাও যাবনা।
আমি বসে থাকব, ভাববো,
তারপর যখন বিকেল গড়াবে, আর আলো পড়ে যাবে
হাঁটতে শুরু করব, একা।
যাব, দেবীভ্রমণে...
উম, ভাববো, কিন্তু কি ভাববো আমি এখন, আজ?
ঠিক আছে বরং ভাবি, আজ কেন মন চাইলোনা ছুটি!
ওকে এত করে বললাম, যাও, ঘুরে এসো!
মন, আচ্ছা, বলোতো, কেন নিলেনা ছুটি?
মন, ম...ন!!! শুনছো?
থাক, শুনোনা, তুমি বরং আমার মতই বসে থাকো, বিশ্রাম করো
...আচ্ছা, কতদিন ঘুমাওনি তুমি?

রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০১১

বোঝার ওপারে দুর্বোধ্য হয়ে রয় বোঝা
না বোঝার বোঝা বড় বোঝা হয়ে যায়।
অস্পষ্ট চেতনায় জাগে ভালবাসা ভ্রূণ
বিবর্ণ ভোর হয়, চেনা পিপাসায়।
ধরো যদি এমন করে দিই
সমুদ্রের বুকে জন্ম দিই ঘাস
আর উড়ুক জোনাকী!
তুমি পা ডুবিয়ে হাঁটলে আর
দেখলে আকাশ তোমার পায়ের পাতায়
হাবুডুবু খাচ্ছে!
হুম! এমনো হয়, সময়ও অসময়ের মত ঠেকে যেন
কিংবা বিরাট এক শূণ্যতায় ভাসে ...ভয়!
এখানে অরণ্যভরা দ্বিধাহীন দ্বৈরথে নামে নিঃসঙ্গতা
আর মর্মর শব্দে স্মৃতি জমা হয়।
যেন ভাসছে এক আসমান চিল আর উন্মুখ চোখ ছুটছে।
যাচ্ছে প্রেম; যাচ্ছে সুখ; অনর্গল পংক্তিমালা
বিবর্ণতায় পড়ছে ভাটা -অবিশ্রান্ত ভ্রমণে।
যে অনুভব করে, যে বোঝে
সে না বললেও বোঝে
যে বোঝেনা, তাকে বোঝাবার
আর কোন চেষ্টা আমি করবোনা।
কাঁদবোনা কখনো  দৃষ্টির অগোচরে
বাঁচবো, তবু ফিরবোনা, কখনোই না।
ও যে ভালোবেসেও ছুঁড়ে ফেলে দেয়
একা, নিঃস্ব করে দেয়।
স্বপ্ন বোনার পর বলে দিয়ে যায়
স্বপ্ন বুনতে মানা!
তোমার সীমানায় পৌঁছুবেনা
আমার দীর্ঘস্বাসেরা
ভালো নেই তুমি
পুড়তে ভালোবাসো, ভালোবাসো পোড়াতে
তোমার আকাংখা সত্য হোক
আমি পুড়ি, পোড়ো তুমিও
আর সুখী হই এই ভেবে
বেঁচে আছি দু'জনেই, পুড়ছি বলে!
বলেছো স্বপ্নের কথা
আমি ভাবি আঁধার যাত্রা
ভাবলেশহীন আলিঙ্গনে, গোত্রহীন সম্পর্কের সুতোয়
আর কতবার হবে শবের স্তব
উড়বে ছাই আকাশে আকাশে
যেখানে নক্ষত্রের খসে পড়া মিথ্যে খেলাচ্ছলে
আহত হই, হিসেব কষি
আর কতোটা পথ পেরুলে আলো ডোবে!
ঝুলিতে কত ধূলো জমেছে, জানিনি কখনো
জানতে কি চেয়েছো তুমিও?
আমি শুধু চলেছি, চলেছি আর
আহত সৈনিকের মত হঠাৎ আবিষ্কার করেছি
তুমি হারিয়েছ সন্তর্পণে।
আমি দিগন্তের কাছে বলেছিলাম-
"আলো যেন না ফুরায়
আমি স্বপ্ন বুনি নিবিড় মমতায়"...
যেখানে আমার চিতা জ্বলে বারবার, প্রতিবার।
আমার স্বপ্নরাজ্য আমায় পোড়ায়।
আমি আজো ভাবি, আসবে তুমি
পথ ফুরোলে, আঁধারশয্যায়।
মিথ্যে অভিযোগে বিজয়ীর বেশে, শেষবারের মত হাসতে!
এখনো নিজেকে দেখো গর্বভরে?
সব পাওয়ার সুখে অসম্পূর্ণের আহাজারি স্পর্শ করেনা?
এখনো মানুষ তুমি স্বপ্ন বোনো?
শংকিত হই, যেন তুমি যাত্রী না হও আঁধারের
প্রতীক্ষা শেষে আমি প্রার্থনায় রত হব
আমায় আর জাগিওনা।
হেসো সম্পূর্ণ বেশে আলোতে আলোতে
ফুরোবেনা সে, আমি  প্রার্থনায়-তোমার বিজয়ে!
নিজে হন্তারক না হও
হত্যা করার অধিকার আমায় দাও, নিজেকে।
বিষে নীল হবোনা...
পরম শান্তিতে চোখ বুজে, অপার্থিব হবো শুধু।
কাব্যের দ্যোতনায় ভাবনা বিন্যস্ত করতে
ইদানীং বড় অস্বস্তিতে ভুগি;
মূলত এখন আর সাজাতে পারিনা কিছু!
বন্ধ্যা আবেগের নদীতে তবু সাঁতরে
চোরাবালিতে বন্ধক রাখি নিষ্ঠুর প্রেম
যে পিছু ছাড়েনি কখনো, আমাকেও ভুলতে দেয়না কিছু।
সময় তার রূপ বদলের পালায় ফিরে, হেরে আসে
পুনরাবৃত হয় ব্যাঙের জীবনচক্রের মত-
আমার স্বপ্ন কারুকাজ।
দুঃখ বাসর যাপন করব জেনেও
বেহুলা হবার ইচ্ছে জাগে
লক্ষিন্দর, তোমায় পেয়েও চাইতে পারিনা।
অন্য মন্দিরে ঘন্টা বাজবে বলে
নগ্ন পূজোয় বিসর্জন দেব অথর্ব জীবন।
ভালোবাসিনি, যখন বাসতে পেরেছি ভালো
হারাতে পারিনি তোমার মাঝে, পারিনা
আমায় যে শেকল পরিয়ে ব্রতী করেছি!
তাই... নিজে হন্তারক না হও
হত্যা করার অধিকার আমায় দাও নিজেকে।
অসীমে তোমাতে হারাব এই জেনে
আমি অপার্থিব হব; পরম শান্তিতে।
ব্রতী হয়ে আর বিসর্জন দেবোনা
সাধের জীবন, নগ্ন পূজোয়।